শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে শিশু বয়সে বাবা হারানো অদম্য বৃষ্টিকে দারিদ্রতা দমাতে পারেনি। সে জেএসসি ও এসএসসি’র পর এবার এইচএসসিতেও জিপিএ- ৫ পেয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এবার বৃষ্টির স্বপ্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া। তার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে দরিদ্র অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়া।
ইফতেখার জাহান বৃষ্টি মাত্র আড়াই বছর বয়সে পিতা হারিয়ে পিতার ভালবাসা ও আদর থেকে বঞ্চিত হয়। বৃষ্টি’র পিতা ইসরাফিল আলম জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালে মারা যান। এরপর তাদের গ্রামের বাড়ি বারোমারী থেকে দাদার বাড়িতে আশ্রয় না পেয়ে স্ব-পরিবারে চলে যায় ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরে নানার আশ্রয়ে।
বৃষ্টি’র বড় ভাই ইসরাফিল ইবনে শাকিল তৎকালে দশম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় সংসারের হাল ধরেন মাত্র কয়েক হাজার টাকায় বেতনে গাজিপুরে একটি গার্মেন্টস এর চাকুরি নিয়ে। এমন টানাপোড়ান সংসারের পাশপাশি বৃষ্টির লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেলেও দমে যায়নি বৃষ্টি ও তার মা-ভাই। এক পর্যায়ে অভাবের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে জেএসসি ও এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে থমকে যায় ভালো কলেজে ভর্তি এবং পরবর্তি পড়াশোনার খরচের জোগান নিয়ে।
এদিকে ওই সময় বৃষ্টি’র স্বপ্ন নিয়ে বেশ কিছু পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে বৃষ্টির আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয় সহৃদয়বান ব্যাক্তি এগিয়ে এসে বষ্টি’র পড়াশোনার জন্য আর্থিক জোগান দিলে ভর্তি হয় ময়মনসিংহ ক্যান্ট পাবলিক কলেজে। এখানে সে দৈন্যতাকে পিছু ফেলে তার অদম্য শপথে অটুট থেকে পড়াশোনা চালিয়ে এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ইতিমধ্যে সে মেডিকেল কোচিং এ ভর্তি হয়ে তার মিশন সফলের স্বপ্ন বুনছে।
পড়াশোনায় অদম্য মেয়ের ইচ্ছা পুরন করতে তারা দুই বছর আগেই গ্রামের বাড়ি-ঘর ছেড়ে ময়মনসিংহ শহরে এসে ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। গ্রামের বাড়ি উপজেলার পলাশীকুড়া গ্রামে খুব একটা যাওয়া হয়না। বৃষ্টি শপথ নিয়েছে মেডিকেলে ভর্তি হয়েই সে তার বাপ-দাদার ভিটেতে পা রাখবে। বৃষ্টি গত দুই বছরে এক মুহুর্তের জন্য গ্রামের বাড়িতে যায়নি কেবলমাত্র পড়াশোনার কথা চিন্তা করে। তার ধ্যান-ঘুম বলতে একটাই সে পড়াশোনা করে ডাক্তার হবেন।
বৃষ্টির মা সালমা বেগম বলেন, ছোট বেলায় বাবাকে হারালেও পড়াশোনায় ছিল খুব ঝোক। তাই মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে নানা স্থানে ধার দেনা আর কষ্ট করে এবং সরকারী-বেসরকারী বৃত্তির টাকায় এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। মেডিকেলে ভর্তির স্বপ্নটা পুরন হলেই পৈত্রিক ভিটে-মাটি যা আছে তা বিক্রি করে হলেও বৃষ্টি’র পড়াশোনা চালিয়ে যাবো। ভবিষৎতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার ইচ্ছে প্রকাশ করে সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছে বৃষ্টি।