গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে বইছে তাপদাহ। ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অন্যদিকে পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অসহনীয় গরমের তীব্রতা। খেটে খাওয়া কিংবা দিনমজুর মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে অন্য সবার চেয়ে বেশি। রোজা রেখে তীব্র গরম সহ্য করে চালিয়ে নিতে হচ্ছে জীবিকা নির্বাহের কাজ। অপরদিকে তীব্র গরমের কারণে সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে থাকে অসুস্থ, বয়স্ক এবং শিশুরা।
তীব্র গরমে রোজায় সুস্থ থাকতে করণীয় কি জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, এখন রোজার মাস ধর্মপ্রাণ মানুষ রোজা রাখছেন। তীব্র গরমে এই মানুষ যখন বাইরে যায়, শারীরিক পরিশ্রম করেন, তখন তাদের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে বাইরে রোদে না যাওয়া। এরপরেও যদি বাইরে কিংবা রোদে যেতেই হয় এবং পানিশূন্যতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ জীবন বাঁচানোর তাগিদে রোজা ভাঙতে হবে। অর্থাৎ এমন দুঃসহ গরমে কেউ যদি ক্লান্ত হয়ে, ঘেমে গিয়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে সে যেন ওরস্যালাইন, তরল খাবার খায় এবং ছায়াযুক্ত স্থানে থাকে, নাহলে সে জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, জ্ঞান হারানোর দুটো কারণ, একটি শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হওয়া এবং যেহেতু তিনি রোজা থাকায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে আছেন, এর ফলে রক্তে সুগার লেভেল কমে যেতে পারে। এই দুই কারণে মারাত্মক অবস্থা হতে পারে। এজন্য আমাদের পরামর্শ যারা রোজা রাখছেন, তারা যেন রোদে কম যান। আর যাদের যেতেই হয়, তারা যেন নিজেদের শারীরিক অবস্থা বুঝে তারপর যান। শ্রমজীবী মানুষেরাও যেন একটু সাবধানে কাজ করেন।
তীব্র গরমের রোজায় সুস্থ থাকতে কি কি বিষয় মেনে চলতে হবে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ করেই তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এই গরমে সরাসরি রোদে যত কম যাওয়া যায় ততই ভালো।
তিনি বলেন, যারা হৃদরোগ, লিভার, কিডনি এবং স্টোকের রোগী তারা নেহায়েতই খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক যাদের বাইরে রোজা রেখেও কাজ করতে হয়, তারা যেন ছাতা ব্যবহার করে, ছাতা নাহলেও অন্তত মাথায় ক্যাপ কিংবা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। কাজের মাঝে কিছুক্ষণ পরপর অন্তত কয়েক মিনিট যেন ছায়াযুক্ত স্থানে বিশ্রাম নেয়। একনাগাড়ে কেউ যেন রোজা রেখে রোদে কাজ না করে, এটা হলো সবচেয়ে জরুরি কথা।
তিনি আরও বলেন, রোজা প্রায় শেষের দিকে, যারা রোজা রাখছেন তারা যেন রাতে বেশি বেশি করে পানি খান। এই সময় শরীর থেকে অনেক বেশি ঘামের মাধ্যমে লবণ বের হয়ে যায়। শরীর থেকে লবণ বের হয়ে গেলে অবসাদ এবং ক্লান্তি মাথা ঘোরার মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনে হালকা লবণ মিশ্রিত পানি কিংবা ওরস্যালাইন খাওয়া যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক আরও জানান, এই সময়ে যারা বাইরে যাবেন তারা যেন সুতি ঢিলেঢালা, পাতলা কাপড় পরিধান করেন। পাশাপাশি যারা বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, তারাও গরমে ঝুঁকিতে থাকে। তাদের জন্যও এসব কথা প্রযোজ্য। আর যারা বাসায় থাকছেন, যতটা সম্ভব রুম যেন ঠাণ্ডা থাকে। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা এসি বা ফ্যান ব্যবহার করবেন। ঘরে যেন পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশ করে, সেজন্য দরজা জানালা খোলা রাখাই ভালো। এসব বিষয় মেনে চললেই হবে।