ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম এর প্রচলন বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে, তবে তাড়াহুড়ো করে এটি জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার বিকেলে, গণভবনে বিমসটেক সম্মেলন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি কিছু জায়গায় শুরু হোক, সীমিত আকারে এটা দেখুক নির্বাচন কমিশন। প্রযুক্তির কোন সিস্টেম লস হয় কি না, সেটা দেখা যাক। তেমনটা হলে সঙ্গে সঙ্গে তা বাতিল করা হবে। এটা এমন না যে, এটাই শেষ কথা। আমরা সীমিত আকারে শুরু করি, প্রযুক্তির ব্যবহার।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইভিএম ডিজিটাল বাংলাদেশেরই একটা পার্ট। অামরা এখন টাকা পাঠাচ্ছি অনলাইনে, গাড়ি কিনছি অনলাইনে, সবজি কিনছি অনলাইনে। এটা ঠিক যে প্রযুক্তি আমাদের সবসময়ই সুবিধা দেয় তা কিন্তু নয়।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়া বিএনপির সিদ্ধান্ত।’ তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপি যখন সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে, তারা তাদের জন্মস্থানটা খোঁজ করুক। কোথায়, কীভাবে হয়েছে দেখুক। তাদের জন্ম লগ্নটা মনে করুক। শুভ না অশুভ লগ্ন নিয়ে তারা জন্ম নিয়েছে।’
খালেদা জিয়ার সময়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটের কথা যদি কারও মনে থাকে, তারা কী করেছিল। ঘোষণা দিয়েছিল দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী। ১৫ দিনও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। জনগণ চাইলে তো থাকতে পারতো। কারচুপি করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল বলে বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে।’
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তো আমি গ্রেপ্তার করিনি। সে গ্রেপ্তার হয়েছে এতিমের টাকা চুরি করে। তাদের আমলে দুর্নীতি, ঘুষ নেয়ার অনেক ঘটনা ঘটেছে। খালেদার বিরুদ্ধে মামলা আমাদের সরকারের দেয়া নয়। ওনারই (খালেদা জিয়ার) পছন্দের ইয়াজুদ্দিন, ফখরুদ্দীন সাহেবের আমলে দেয়া।’ তিনি (খালেদা জিয়া) যদি মুক্তি চান, কোর্টের মাধ্যমে আসতে হবে। আর আদালতে মুক্তি না পেলে রাষ্ট্রপতির কাছে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’
অাগামী নির্বাচন হবে- কেউ ঠেকাতে পারবেনা মন্তব্য করে, প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোট কারচুপি করতে পারবে না বলেই বিএনপি ইভিএম-এর বিরোধীতা করছে।’
বিমসটেক সম্মেলনে অংশ নেয়া রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে খুবই আন্তরিকপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্য আরও বাড়ানোর পাশাপাশি কিভাবে বিমসটেক আরও শক্তিশালী করা যায় সে ব্যাপারে আলাপ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হোক বাংলাদেশ তা চায় না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে; মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট তালিকা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’ তবে প্রধানমন্ত্রী এও জানান, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে সবসময়ই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে যখনই তাদের ফিরিয়ে নেয়ার সময় আসে তখনই তারা নানা সমস্যা তৈরি করে।’
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রকাশিত এক বইয়ে ভুয়া ছবি ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশেও এ ধরনের ছবি বানানো হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার এ ধরনের ছবি বানানো কাদের কাছে শিখলো। আমাদের জামাত-বিএনপির কাছ থেকে শিখলো কি না! বিভিন্ন সময় তারা কিন্তু এরকম ভুয়া ছবি ব্যবহার করেছে।’
বৈঠকে শীতকালে বাংলাদেশ থেকে ভুটানে কৃষিপণ্য সরবরাহ করা। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কিভাবে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ ও জোরদার করা যায় সে বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বিমসটেক সম্মেলনে দ্বিপাক্ষীক বিভিন্ন বিষয় যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, সৌরশক্তির ব্যবহার এবং নেপালের পানি বিদ্যুৎ প্রক্রিয়াকে কিভাবে আরও দ্রুত তরান্বিত করে সে সুবিধা বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সাত দেশের জোট বিমসটেকভুক্ত সদস্য দেশগুলো উপকৃত হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে, গেল ৩০ ও ৩১শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোর জোট- বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন, বিমসটেক এর চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলন থেকে শুক্রবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র: ডিবিসি নিউজ
শে.টা.বা.জ