মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথার প্রধান অংশ জুড়ে আছেন দেশের অসংখ্য উদ্যমী সাহসী মানুষ; যারা দেশকে ভালোবেসে যার যার জায়গা থেকে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন হানাদার বাহিনীর মোকাবেলা করতে। তাদের অনেকে দেশের জন্য শহীদ হন, অনেকে বিজয় নিয়ে ঘরে ফেরেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও এখন দেশের শোবিজে অঙ্গনে কাজ করজেন। এই আয়োজনে তিন তারকার বীর বাবাদের গল্প জানবো-
আফরান নিশো
মডেলিং দিয়ে শুরু। এরপর নাম লেখান অভিনয়ে। বিনোদনের এই জগতে নিশোর পথচলার বয়স ২০ হতে চলেছে। এই দুই দশকপূর্তির জের ধরেই অভিনেতা আফরান নিশোর সঙ্গে আলাপ করতে বসি। তার কাছে জানতে চেয়েছি তার বাবার গল্প। বলে রাখা ভালো, আফরান নিশোর বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য।
আফরান নিশো বলেন, বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প শুনেছি। বাবার যুদ্ধে যাওয়াটা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেই। জাতির জনকের ভাষণ বাবাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণীত করেছিল। ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অনেক অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন বাবা। সেসব গল্প তার মুখ থেকে শুনেছি। একবার নদীতে পাক হানাদার বাহিনীর নৌবহরে হামলা চালান বাবা ও তার সঙ্গীরা। এ অপারেশনে সফল হয়েছিলেন তারা। আরেক অপারেশনে বাবাসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাকে অনেক সময় কচুরিপানাওয়ালা পুকুরে ডুবে থাকতে হয়েছিল। বাবার মুখে যখন এসব গল্প শুনি, তখন পুরো শরীর শিউরে ওঠে।
মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া
মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া, এই প্রজন্মের নন্দিত অভিনেত্রী। আজ থেকে আট বছর আগে অভিনয়কে ভালোবেসে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে নিয়ে মিডিয়াতে তার যাত্রা শুরু হয়। ভালো গল্পের অসংখ্য নাটকে অভিনয় করে দর্শকের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। তার বাবা এ বি এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তার বাবা নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন দেশে যুদ্ধ শুরু হয়।
বাবার মুখ থেকে যুদ্ধের অনেক গল্প শুনেছেন টয়া। তিনি জানান, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে বাবা এপ্রিলের শেষ দিকে বাড়ি ছাড়েন। চলে যান ভারতের সোনাইমুড়ায়। সেখান থেকে মেলাঘরে। সেখানে টয়ার বাবাকে ট্রেনিং দেন মেজর মতিন ও সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ। ট্রেনিং শেষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে বেশির ভাগ অপারেশনে অংশ নেন। এই অভিনেত্রী বলেন, সুযোগ পেলেই বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি।
শবনম ফারিয়া
ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। যদিও তিনি এখন আর ছোট পর্দায় সীমাবদ্ধ নন, বড় পর্দায়ও বিচরণ রয়েছে তার। এ অভিনেত্রীর জন্মস্থান চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ১১ নং পশ্চিম ফতেপুর মান্দারতলী গ্রামে। তার বাবা মরহুম ডা. মীর আবদুল্লাহ একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ছাত্রাবস্থায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
জানা যায়, একাত্তর সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ফারিয়ার বাবা। এই জনসভায় তিনিও উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা পান মীর আবদুল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পর এক রাতে বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে ভারতে চলে যান। ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। বাবাকে নিয়ে ভীষণ গর্ববোধ করেন এই অভিনেত্রী।