বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ একটি অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। তাই বার বার এই বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রে। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন চলচ্চিত্র ছাড়াও এর উপর নির্মিত হয়েছে অসংখ প্রামাণ্যচিত্র , স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র । দেশী নির্মতাদের পাশাপাশি বিদেশী অনেক নির্মাতা কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের উপর। সব মিলিয়ে তারাই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে স্বগৌরবে আলো ছড়াবে যুগে যুগে, ইতিহাস কে ধরে রাখতে পারবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, কেবল একটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কিংবা ভৌগলিক সীমারেখা অর্জনের লড়াই ছিল না। বরং তা ছিল আপামর বাঙালীর স্বাধীকার আদায়ের বাঁচা মড়ার লড়াই। নারী শিশু বয়োবৃদ্ধ এমনকি প্রতিবন্ধীরাও এ যুদ্ধে তাই অংশ নিয়েছিল জীবন প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ তাই একটি চেতনা, দেশপ্রেমের অনুভব। সবার আগে দেশ, দেশের সম্মান, নতুন প্রজন্মের মাঝে এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে মাঠপর্যায়ে নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করছে জেলা তথ্য অফিস।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে জেলাজুড়ে চলছে নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। জেলা তথ্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শোকের মাস আগষ্টে পুরো মাস জুড়ে বিভিন্ন স্থানে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গেরিলা, আমার বন্ধু রাশেদ, আগুনের পরশমণি ও জয়যাত্রা চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আজ রবিবার রাতেও শেরপুর শহরের নিউমার্কেট জনসাধারণের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে গেরিলা ছবিটি প্রদর্শিত হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় পর্দায় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এই চলচ্চিত্র উপভোগ করছেন অনেকেই। ভীড় না থাকলেও বেশ তরুণদের দেখা মেলে এই স্থানে। আবার অনেকেই পাশের দোকান থেকে কেউ আবার নিউমার্কেট নতুন ভবনের ২য় তলা থেকে ছবি উপভোগ করেছেন।
কলেজ পড়ুয়া সুমন আহমেদের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সুমন শেরপুর টাইমসকে বলেন, পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় জেনেছি। কিন্তু পাকিস্তানী বাহিনী মানুষের উপর কতটা অত্যাচার করেছিল তা বোঝা যায় এসব চলচিত্র দেখলে। শত অত্যাচারের পরেও আমাদের জয় হয়েছে, এসেছে স্বাধীনতা। এ গর্বের ইতিহাস সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে নিয়মিত এ ধরনের আয়োজন হওয়া প্রয়োজন।
জেলা তথ্য অফিসার তাহলিমা জান্নাত শেরপুর টাইমসকে বলেন, মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে জেলাজুড়ে নিয়মিত এই আয়োজন হচ্ছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছে।
সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরু শেরপুর টাইমসকে বলেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বীরত্ব গাঁথা সম্পর্কে জানতে পারছে সাধারণ মানুষ। জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগের কথাও জানতে পারছে মানুষ। তবে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যদি সরাসরি তাদের অভিজ্ঞতা শোনানোর আয়োজন করা যায়, মানুষ তা আরো ভালোভাবে গ্রহণ করবে বলে আমার বিশ্বাস।