যথাসময়ে সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল হবে নভেম্বরের মাঝামাঝি বা এর আগে আর নির্বাচন হবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে ভোটে না আসার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধান বহাল রেখেই নির্বাচন হবে। পছন্দ না হলে কারও জন্য আটকে থাকবে না। নভেম্বরে নির্বাচনের ট্রেন ছেড়ে দিবে। মিস করলে পিছিয়ে পড়বেন।
রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষ্যে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ আয়োজিত আলোচনাসভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা শহর দখলের নামে আগুন-সন্ত্রাসের হুমকি দিচ্ছে বিএনপি। এসব করে লাভ হবে না। তাদের (বিএনপি) খায়েশ পূরণ হবে না। তিনি বলেন, যারা মনে মনে স্বপ্ন দেখছেন রাস্তা অবরোধ বা দখল করে এবং আগের মতো বাস, মানুষ পুড়িয়ে আপনারা আপনাদের ইচ্ছামতো সংবিধানকে কচুকাটা করবেন, সেই স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না। সেটা আমরা হতে দেব না। এই সংবিধান বহাল রেখে নির্বাচন হবে। কারও জন্য নির্বাচন আটকে থাকবে না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, সংবিধানকে যারা কচুকাটা করেছে, তারাই এখন সংবিধান মানে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার উচ্চ আদালত বাদ দিয়েছে, আওয়ামী লীগ বাদ দেয়নি। যে জিনিস নেই, সেটা দাবি করছে বিএনপি। এদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আসবে না। এই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কারও জন্য নির্বাচন আটকে থাকবে না। কেউ আসুক আর না আসুক, তার জন্য অপেক্ষা করা হবে না।
এক্সপ্রেসওয়েতে উঠলে মনে হয় ইউরোপ, নিচে নামলেই গরিব : অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এয়ারপোর্ট থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠলে ঢাকাকে মনে হয় ইউরোপ। আর নামলেই আমাদের বাসগুলো দেখলে মনে হয় গরিব গরিব চেহারা। রাজধানীতে চলাচল করা গণপরিবহণের অবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, জীর্ণ, মুড়ির টিন চলছে। গায়ে লেখা ‘আল্লাহর নামে চলিলাম’। আর যেতে যেতে খাদের মধ্যে অথবা পাশের আইল্যান্ডের ওপর। মালিক সমিতিকে বলব, এসব গাড়ি কীভাবে চলে ঢাকা শহরে?
বাসগুলোকে মেরামত করে সুন্দর রাখার পরামর্শ দিয়ে বাস মালিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, এই কথা কতবার বললাম। কী লাভ হলো? কথা অনেক বলেছি। কথা কাজে পরিণত না হলে মূল্য থাকে না।
লোড কন্ট্রোল স্টেশন : লোড কন্ট্রোল স্টেশন না থাকায় কোটি কোটি টাকায় নির্মিত সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৭টা লোড কন্ট্রোল স্টেশন প্রকল্পে আছে। এগুলো করা প্রথম দায়িত্ব। কয়টা হয়েছে? তখন নিজের আসন থেকে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ১২টার কাজ শেষ হয়েছে। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কাজ শেষ, কার্যকর তো হচ্ছে না। মানুষ সুফল না পেলে ১২টা হয়ে লাভ কী?
ইজিবাইক, নছিমন-করিমন চলাচল বন্ধ হয়নি : এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বেশির ভাগ জায়গায় এটি বন্ধ হয়নি। আমি ভিজিটে গেলে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ হয়, চলে এলেই শুরু হয়ে যায়। নছিমন-করিমন ছোট যান, বন্ধ করতে গেলে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বাধা আসে। জনপ্রতিনিধিরা বলেন, গরিব মানুষ যাবে কোথায়? ভোটের রাজনীতিতে কেউ ভোট নষ্ট করতে চায় না। অনেক বিলম্বের পর ড্রাইভিং লাইসেন্সের সমস্যা সমাধান হওয়ার পথে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
আমি পারফেক্ট মানুষ, এ দাবি করব না : ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক পরিবহণ আইন করলাম। কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এত বিলম্বিত করেছি, দুঃখজনক। আইন আছে, প্রয়োগ নেই-এমন আইনের দরকার কী? নিজের মন্ত্রণালয়ের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, আমি পারফেক্ট মানুষ, এ দাবি করব না। ভুলত্রুটি হতে পারে। ভালো করতে চেষ্টা করেছি, দুর্নীতি কমাতে চেষ্টা করেছি। টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য বন্ধ করতে পেরেছি।
সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তৃতা করেন সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম রওশন আরা মান্নান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, হাইওয়ে পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি একেএম শাহাবুদ্দিন খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা, মহাসচিব এনায়েত উল্যাহ খন্দকার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ।