ডেঙ্গু জ্বর ও প্রাসঙ্গিক কথা
– তাশফিয়া তারান্নুম তিফা
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে যে সমস্যাটি মাথানাড়া দিয়ে উঠেছে তার নাম হচ্ছে ডেঙ্গু। এই নামটির সাথে আমরা পূর্বপরিচিত। ডেঙ্গু হচ্ছে মূলত একপ্রকার সংক্রামক রোগ,যা “ডেঙ্গু জ্বর” নামে পরিচিত। বিশ্বব্যাপী এই জ্বরে প্রতিবছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুজ্বর বড় আকার ধারণ করে। এডিস নামক মশার কামড়ের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়।
বর্তমানে এই উপসর্গগুলো কিছুটা ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। যেমন- প্রচণ্ড মাথাব্যাথা, জ্বর (১০৩°-১০৬° ফারেনহাইট), বমি, পেট,সমস্ত শরীর ও গিড়ায় ব্যাথা এবং চামড়ার নিচে লাল ফুসকুড়ি উঠা। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা যখন কামড়ায়, মশার লালার মাধ্যমে ভাইরাস ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে। এটি শ্বেত রক্তকণিকায় প্রবেশ করে এবং যখন কোষগুলি দেহের সর্বত্র চলাচল করে তখন সেগুলোর ভেতরে এই ভাইরাস প্রজননকার্য চালায়। প্রবল সংক্রমণে, শরীরের ভেতর ভাইরাসের উৎপাদন অত্যধিক বৃদ্ধি পায় এবং যকৃত ও অস্থিমজ্জার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙগ ক্ষতি গ্রস্ত হতে পারে।
সাধারণভাবে যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তদের ৮০% উপসর্গবিহীন অথবা সাধারণ জ্বরের মতো সামান্য উপসর্গ লক্ষণীয়। তবে বাকিদের রোগ হতে পারে আরো জটিল এবং স্বল্প অনুপাতে এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, সরকারী হিসাবমতে ৪০ জন এবং বেসরকারি হিসাবমতে ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেংগুতে আক্রান্ত হয়ে। বর্তমানে দেশে ডেংগুর যে প্রাদুর্ভাব তার লক্ষণ ও তীব্রতা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা আলাদা হলেও ২০০২ সালে বাংলাদেশে যে ডেংগু জ্বর হয়েছিল তার সংগে অনেকটাই মিল রয়েছে তিনটি দিক থেকে। দিক তিনটি হচ্ছে রোগের তীব্রতা, ছড়ানোর প্যাটার্ন, মৃত্যুর হার।
বর্তমানে প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন ডেংগু বিরোধি সচেতনতামূলক অভিযান কার্যক্রম চলছে। এসকল কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রেখে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি নাশ করা। সেজন্য অঞ্চলভিত্তিক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছ। কিন্তু এসকল কার্যক্রম ততক্ষণ পর্যন্ত সফলতা লাভ করতে পারবে না যতক্ষণ না আমরা নিজে থেকে সচেতনতাবোধ জাগ্রত করছি। এডিস মশার বংশ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আমরা নিজেরাই পরোক্ষভাবে পালন করছি পরিবেশকে অস্বচ্ছ রাখার মাধ্যমে। আমাদের নিজেদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে এবং এই পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করার জন্য স্বেচ্ছায় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়িত করতে হবে।
এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হচ্ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা এবং এর বৃদ্ধি সম্পর্কে অবগত হওয়া। সে অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন : পরিবেশ সংরক্ষণ করা ও পরিচ্ছন্ন রাখার মতো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করতে পারলেই এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গুর এই বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ লাভ করবো আমরা।
লেখক : তাশফিয়া তারান্নুম তিফা,
শিক্ষার্থী ও শিশু সাংবাদিক।
শেরপুর টাইমস ডট কম-এর মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখার দায়ভার লেখকের নিজের। এর দায় শেরপুর টাইমস কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে না। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে শেরপুর টাইমসের মতামত পাতায় আপনিও আপনার মতামত জানাতে পারেন sherpurtimesdesk@gmail.com এই মেইলে।