ডাক্তার সংকটে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সংকটের মধ্যেও ডাক্তার থাকেন অন্যত্র। জনবল সংকটও চরমে। রয়েছে প্রয়োজনীয সরঞ্জামাদির অভাব। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও ৩১ শয্যার কার্যক্রমেও নানা সমস্যা জর্জরিত। এতে নামমাত্র চলছে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম।
ফলে প্রতিদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা শতশত মানুষ প্রয়োজনীয স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, সেবার মান বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ। বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা লোকজনের সাথে কথা বলে ওঠে আসে এমন চিত্র।
বুধবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি রোগি আছিয়া বেগম (৪৫)। বাড়ি উপজেলার পোড়াগড় গ্রামে। তিনি জানান, তার প্রেসার ও শারিরীক অসুস্থ্যতার কারণে দুইদিন আগে ভর্তি হয়েছেন। তাকে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন। ওষুধ কিনতে হবে বাইরে থেকে। তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হইছি। কোনো ওষুধ পাই নাই। নার্সেরা আহে। অপর রোগি মমেলা বেগম (৫৫)। বাড়ি উত্তর ষাইটকাকড়া। তিনি বলেন, পেটের ব্যাথার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। অহনও ব্যাথা কমে নাই। ওষুধ কিনে খাইতাছি। আপারা (নার্স) কইলো ডাক্তার আইবো।
এ সময় চিকিৎসা নিতে আসা টিকেট কাউন্টারে কথা হয় মরিচাপাড়া থেকে আসা আয়শা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, আড়াই মাসের শিশু সন্তান নিয়ে আইছি। বাচ্চার জন্য আলাদা কোনো ডাক্তার নাই। এর পরেও লাইনে দাঁড়াইয়া আছি। এভাবে প্রতিদিন শতশত মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন। তবে ডাক্তার সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেকে।
জানা যায়, পাকিস্তান আমলে নির্মিত হয় ৩১ শয্যার শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর হাসপাতালটি ৫০ শয্যার উদ্বোধন হয়। দীর্ঘদিন পরেও ৫০ শয্যার হাসপাতাল চলছে ৩১ শয্যার। এখানে জুনিয়র কনসালটেন্ট মিডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারিসহ সিংগাবরনা, কাকিলাকুড়া, গোসাইপুর, শ্রীবরদী সদর, কুড়িকাহনীয়া ও গড়জরিপা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারি সার্জন পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে রানীশিমুল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কম্েপ্লক্সের দায়িত্বরত সহকারি সার্জন ডা. মমিনুল ইসলাম ও তাতিহাটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারি সার্জন ডা. তাজকিয়া তাসনিম আহমদ প্রেষণে রয়েছেন জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জিয়াউল হক প্রেষণে রয়েছেন ঢাকা সিইউএসডি হাসপাতালে। গাইনি বিভাগের ডা. জোৎ¯œারা খাতুন আসেন মাসে দুই একদিন। হোমিও ডা. ওয়াদুদ হক দীর্ঘদিন যাবত প্রেষনে হোসেনপুর ইউএইচসিতে কর্মরত। সূত্রমতে, ওইসব ডাক্তাররা যোগদানের পর অনন্ত ২ বছর থাকার কথা থাকলেও তিন চার মাসও হাসপাতালে আসেন নাই। এছাড়া নেই প্যাথলজিস্ট ও কার্ডিওগ্রাফার। দুটি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি একেবারে বিকল। অন্যটি চলে লক্করঝক্কর। এক্সরে মেশিনটিতে দেখা দিয়েছে ত্রুটি । ইসিজি মেশিনটিও নষ্ট।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ডাক্তার সংকটের কারণে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট দিয়ে রোগিদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এতে ডাক্তার সংকটের কারণে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি আরো বেশি সেবা দেয়ার।
তবে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি সংকটের কারণে কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অভিজিৎ রায় বলেন, প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত রোগি আসেন ইনডোরে। আউটডোরে আসেন আড়াইশ থেকে ৩শ রোগি। আউটডোর এবং ইনডোরে প্রয়োজনীয় ওষুধ রয়েছে। তবে যা আছে তা দিয়ে রোগিদের মান সম্মত সেবা দিতে আমরা চেষ্টা করছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবার মান হবে উন্নত। স্বাস্থ্য সেবা পাবে উপজেলাবাসী। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সচেতন মহল।