ক্ষুদ্র লৌহজাত শিল্পের উপর নির্ভরশীল শেরপুরের পেশাদার কামাররা। বছর ঘুরে পবিত্র ঈদুল আযহা এলেই লোহার নানা জিনিস তৈরির টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে ওঠে ব্যস্ত এ শহর। ঈদকে সামনে রেখে কোরবানি পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম তৈরিতে জন্য ব্যস্ত সময় কাটায় জেলার নকলাসহ ৫টি উপজেলার কামারা। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যার প্রভাব পড়েছে তাদের কর্মকান্ডে। এজন্য তাদের ব্যস্ততা গতবারের চাইতে তুলনামূলক কম। তারওপর এবার কয়লা ও লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভও হচ্ছে না তাদের।
ঈদুল আযহার কোরবানি পশু জবাইয়ের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা। একদিকে হাপরে আগুনের শিখা অন্যদিকে হাতুড়ি পেটানোর টুংটাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি। কোরবানী ঈদ উপলক্ষে কামারদের তৈরি লোহার বিভিন্ন পণ্যের বেশ কদর রয়েছে। বহু বছর আগে থেকেই সনাতন পদ্ধতিতে তারা তৈরি করে আসছেন দা, বঁটি, কোদাল, ছুরি, খোনতা, কুড়ালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। আবার কেউ পুরনো দা, বটি, ছুরি নতুন করে ধার দেওয়ার জন্য ভীড় জমাচ্ছে কামারীদের দোকানে। তবে বিগত সময়ের তুলনায় এসব সরঞ্জামাদীর দাম অনেকটাই বেশি।
জেলার বিভিন্ন কামারদের দোকান ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কামারগণ। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদের এ সময়টা বরাবরই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। পশু জবাইর সরঞ্জামাদী কিনতেও লোকজন ভিড় জমায় বিভিন্ন কামারের দোকানে। তাই কামারের দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে গরু কাটার বিভিন্ন উপকরণ। ছোট ছুরি থেকে শুরু করে বড় ছুরি।
শহর-গ্রাম সবখানেই কামাররা সমান ব্যস্ত পুরোনো দা, ছুরি এবং বঁটিতে শাণ দিতে। আবার মোটর চালিত মেশিনে শান দেয়ার কাজ চলছে পুরানোগুলোর। কেউবা ব্যস্ত নতুন নতুন দা-ছুরি তৈরিতে। তাই দম ফেলার যেন সময় নেই তাদের। কোরবানিদাতারা কোরবানির পশু কাঁটাছেড়া করার জন্যে পরিবারের ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত সবক’টি দা ছুরি, বটি শাণ দেয়ার জন্যে নিয়ে আসছে কামারদের কাছে। ফলে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কামারদের বিরামহীন ব্যস্ততা।
নকলা বাজারের কামার নজরুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে জানান, বছরের অন্য সময়ে একজন কারিগর দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং একজন সহযোগী ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রোজগার করেন। কিন্তু কোরবানী ঈদ সামনে রেখে এখন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয় কিন্তু এবছর বন্যার কারণে এখনো কাজের চাপ বাড়েনি। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে কাজের চাপ বাড়বে তখন, সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্তও এসব দা, কাচি, ছুড়ি বানাতে হবে। বর্তমানে একজন কারিগর দিনে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা ও একজন সহযোগী ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করছেন।
আয়নাল হোসেন জানান, অন্যান্যবার ঈদের একমাস আগে থেকেই কাজের চাপ থাকলেও এবার বন্যার কারণে কাজের অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া কয়লা সংকটের কারণে আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে, সেজন্য খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এমনিতেই ক্রেতা কম, তার উপর খরচ বেশি থাকায় তারা বেকায়দায় পড়েছেন। গতবার যে কয়লার বস্তা ৭শ টাকায় কিনেছেন এবার সেই বস্তা ১৬শ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন বাজারে কামারদের তৈরি সরঞ্জাম বিক্রি করতেও দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। তারা জানান, অনেকে এখনো কোরবানির গরু না কিনলেও আগেভাগে জবাই ও গোস্ত কাটার সরঞ্জাম কিনছেন।
জেলার অন্যান্য দোকানের কামারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে দা-বঁটি ও ছুরি তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, তাই দামও বেশি।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আমাদের দেশে বর্তমানে কৃষি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানি করা উন্নত মানের আধুনিক যন্ত্রপাতি। যার ফলে সনাতন পদ্ধতির যন্ত্রপাতি ব্যবহারে কৃষকদের তেমন আগ্রহ নেই এজন্য সারা বছর জেলার এ কামাররা হাত গুটিয়ে বসে থাকে কোন কাজ না থাকায়। এখন প্রতি বছর কোরবানী ঈদ আসলেই বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা।