লিগ কাপের ফাইনাল। অসাধারণ দক্ষতায় চোখ ধাঁধানো একটি গোল করলেন লিওনেল মেসি। ম্যাচের সবচেয়ে আবেগঘণ মুহূর্ত যদি এটা হয়, তাহলে টাইব্রেকারকে বলা যাবে সবচেয়ে স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনাকর মুহূর্ত। ক্যারিয়ারে এতটা স্নায়ুর চাপে লিওনেল মেসি নিজেও ভুগেছেন কি না সন্দেহ।
বিশ্বকাপ জয় করেছেন, হাতে উঠেছে কোপা আমেরিকা থেকে শুরু করে ক্লাব পর্যায়ের সব ধরনের শিরোপা। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে টাইব্রেকার নামক এতটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির কখনো মুখোমুখি হবেন কি না, তা হয়তো ভাবতেও পারেননি।
১-১ গোলে ম্যাচ ড্র। খেলা গড়ালো টাইব্রেকারে। নির্ধারিত ৫টি করে শট নিয়েছে দুই দলই। গোল হয়েছে ৪টি করে। এরপর সাডেন ডেথ। কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। ভাবটা এমন, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচাগ্র মেদিনি।’ একে একে টানা ৬টি শট হলো সাডেন ডেথে। সব মিলিয়ে ১১ নম্বর শটে গিয়ে ব্যর্থ হলো ন্যাশভিলে। সফল হলো ইন্টার মিয়ামি।
সে সঙ্গে ন্যাশভিলেকে টাইব্রেকারে ১০-৯ গোলে হারিয়ে এই প্রথমবারের মত কোনো টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হলো ইন্টার মিয়ামি। লিওনেল মেসি যোগ দেয়ার পর এই ক্লাবটির যে বিশাল পরিবর্তন হলো, এই চ্যাম্পিয়নশিপই তার তার প্রমাণ।
টাইব্রেকারের সাডেন ডেথে একে একে প্রতিটি শটই জড়িয়ে যাচ্ছিলো জালে। দুই পক্ষের কারোরই যেন থামার কোনো লক্ষণ নেই। ১১ নম্বর শটটি নেন দুই দলের গোলরক্ষকরা। ইন্টার মিয়ামির হয়ে ড্রেক ক্যালেন্ডার নিজের শট জালে জড়াতে সক্ষম হন। তবে ন্যাশভিলের গোলরক্ষক এলিয়ট প্যানিক্কোর শটটি ডান পাশের কর্নারে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন মিয়ামির গোলরক্ষক ড্রেক ক্যালেন্ডার।
সঙ্গে সঙ্গেই বাধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠেন ইন্টার মিয়ামির ফুটবলাররা। মেসিকে ঘিরে চলতে থাকে সেই উল্লাস। শুধু ইন্টার মিয়ামিই নয়, পুরো টুর্নামেন্টের মধ্যমনিতে পরিণত হন যেন তিনি।
ম্যাচের শুরু থেকেই প্রভাব বিস্তার করে খেলেছে ইন্টার মিয়ামি। যার ফলশ্রুতিতে ২৩তম মিনিটেই দুর্দান্ত এক গোল করে দলকে এগিয়ে দেন লিওনেল মেসি।
রবার্ট টেলরের কাছ থেকে বল পেয়ে প্রায় একক প্রচেষ্টায় কয়েকজনকে কাটিয়ে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের শট নেন মেসি। সেটিই জড়িয়ে যায় ন্যাশভিলের জালে। টানা সাত ম্যাচে এ নিয়ে ১০ম গোল করলেন তিনি। যদিও গোলের আগে মেসি যেন বলই পাচ্ছিলেন না। গোলেল পরও কিছুটা নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। যে কারণে দর্শকরা দুয়ো ধ্বনিও দিয়েছিলো। কিন্তু ম্যাচ জয়ের পর তারাই মেসির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে শুরু করেন।
প্রথমার্ধে এই ১-০ ব্যবধানই ধরে রাখতে পেরেছিলো মেসির দল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে, খেলার ৫৭তম মিনিটে ফাফা পিকল্টের গোলে সমতায় ফেরে ন্যাশভিলে। বাকি সময়ে আর কেউ গোল করতে সক্ষম হয়নি। যার ফলে, খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায় এবং নিষ্পত্তির জন্য খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে প্রথম ৫ শটের মধ্যে ন্যাশভিলের হয়ে দ্বিতীয় শটটি মিস করেন রান্ডাল লিল। ইন্টার মিয়ামির হয়ে পঞ্চম শট মিস করেন ভিক্টর উলোয়া। মিয়ামির হয়ে গোল করেন মেসি, বুস্কেটস, লিওনার্দো কাম্পানা এবং কামাল মিলার। এরপর তো একে একে আরও ৬টি শট হলো। মিয়ামির হয়ে প্রতিটি শটেই গোল করলেন শেরি ক্রিভতসভ, জর্দি আলবা, দিয়েগো গোমেজ, ডেভিড রুইজ, ডি আন্দ্রে ইয়েদলিন এবং ড্রেক ক্যালেন্ডার।