বয়সের ভারে মোছাঃ মনোয়ারা (৯১) লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটে। হাঁটাচলা করতে পারলেও ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। চোখে দেখেন একেবারে কম আবার কানেও শুনেন না। শরীরে আগের মতো শক্তি নেই। শরীরে বাসা বেঁধেছে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখ। কিন্তু ওষুধ কেনার সামর্থ্যও নেই। অনাহারে-অর্ধাহারে ছেলের সংসারে দিন কাটছে তার। মনোয়ার বয়স ৯১ বছর পেরিয়ে গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে তার জন্ম তারিখ ১ মার্চ ১৯২৭। তিনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের মৃত জহুর উদ্দীনের স্ত্রী। স্বামী মারা গেছে প্রায় ৩৫ বছর আগে। কিন্তু মনোয়ার নাম এখনো বয়স্ক বা বিধবা ভাতার তালিকায় ওঠেনি!
সমাজসেবা অফিসের তথ্য বলছে, বয়স্ক ভাতা পেতে নারীর জন্য বয়স ৬২ ও পুরুষের জন্য ৬৫ বছর হওয়া প্রয়োজন। সে হিসেবে মনোয়ারা ২৯ বছর আগে বয়স্কভাতা পাওয়ার কথা। অবশ্য বাংলাদেশে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে প্রথম ‘বয়স্ক ভাতা’ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। শুরুর দিকে মাসিক ভাতার পরিমাণ ১০০ টাকা হলেও বর্তমানে তা ৫০০ টাকা।
সম্প্রতি ঝিনাইগাতী থানা গেইটে কথা হয় মনোয়ারা ও তার ছেলের সঙ্গে। মনোয়ারা সড়কের পাশে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাইলে, প্রথমে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার ছেলে নুর আলী বলেন, তিনি কানে কম শুনতে পান। জোরে আওয়াজ করে বয়স্ক ভাতা পান কি না জানতে চাইলে মনোয়ারা আক্ষেপ করে বলেন, কে আমাকে ভাতা দেবে। এখন তো চলে যাওয়ার (মৃত্যু) সময় হয়ে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে বয়স্ক ভাতার জন্য কত আকুতি-মিনতি করেছি। ‘ভবিষ্যতে এলে পাবেন’ এই আশ্বাসটুকু ছাড়া আর কিছুই কপালে জোটেনি।
তার ছেলে নুর আলী বলেন, আমরা চার ভাই ও এক বোন ছিলাম। দুই ভাই ও বোন মারা গেছে আরো অনেক আগেই। তিনি নিজেও কাজ করতে পারেন না। এখন তার সন্তানদের সহযোগিতায় সংসার চলে তার। একাধিকবার মায়ের বয়স্ক বা বিধবা ভাতার জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো কার্ড পাননি। যেকোনো একটি ভাতা পেলে তার মা (মনোয়ারা) উপকৃত হবেন বলে জানান তিনি।
ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন চাঁন বলেন, এবার বরাদ্দ এলে মনোয়ারাকে বয়স্ক ভাতা কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে বরাদ্দ আসবে তখন মনোয়ারার নামে বয়স্ক বা বিধবা ভাতা কার্ড করে দেওয়া হবে।