শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বোরো ধানের আবাদে ব্যাপক ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পাকার আগ মুহূর্তে এভাবে ধানক্ষেত নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। একইসঙ্গে এ উপজেলায় বোরো ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোরো মৌসুমে ১৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২ হাজার ৪২৪ মেট্রিক টন। তবে নেক ব্লাস্ট খুব বেশি ধানক্ষেতকে ক্ষতি করতে পারেনি বলে দাবি কার্যালয়ের। তাদের হিসাবমতে, মাত্র ৮ হেক্টর জমিতে এ ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সব এলাকাতেই নেক ব্লাস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিআর–- ২৬ ও ২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগ বেশি দেখা দিয়েছে।
কৃষকেরা জানান, দানা পুষ্ট হওয়ার আগমুহূর্তে ধানগাছের ডগা শুকিয়ে যাচ্ছে। এ ছত্রাক দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে কীটনাশক দিয়েও উপকার হচ্ছে না।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বোরো ধানের জমিতে নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত ধানক্ষেত বাদামী আকার ধারণ করেছে। অথচ এ সময়ে সিংহভাগ ধানক্ষেত সোনালী থাকার কথা। আক্রান্ত ধান চিটা হয়ে গেছে। গাছগুলো আগাম কেটে ফেলছে, গোখাদ্য বানাতে।
সদরের কৃষক মো. কফিল উদ্দিন বলেন, তিনি ৫০শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়ে পুরো ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো কীটনাশক দিয়েই লাভ হয়নি।
বালিয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সাদ্দাম মন্ডল বলেন, ‘আমার দেড় একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কত চেষ্টা করলাম। কিছুতেই লাভ হলো না।’
কৃষকেরা জানান, গত বছর দ’ুদফায় অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে অনেক এলাকার বোরো ও আমন ধান নষ্ট হয়ে যায়। এবার বোরো আবাদেও মার খেলে তাদের বাঁচার উপায় থাকবে না। বিশেষ করে প্রান্তিক যেসব চাষি জমি বর্গা নিয়ে ও ধারদেনা করে ধানের চাষ করেছেন, তারা বিপাকে পড়বেন।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল আওয়াল স্বীকার করে বলেন, ‘ধানক্ষেতে নেক ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে, তবে ব্যাপক আকারে নয়। এতে ফলন বিপর্যের সম্ভাবনাও নেই।’
তিনি বলেন,‘নেক ব্লাস্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা কৃষক পর্যায়ে সভা করছি। লিফলেট বিতরণ করে কৃষকদের মাঝে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছত্রাক থেকে রক্ষা পেতে নাটিভো, ট্রোফার, ফিলিয়া, ফিল্টিমা, ব্লাস্টিন ছত্রাকনাশক ধানক্ষেতে ছিটানোর পরামর্শ দেন তিনি।