শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রবিত মারাক (৩০) নামে ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক যুবক বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। রবিত মারাক
উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনী গ্রামের মৃত নিকোলাসের ছেলে। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ২ শিশুসন্তানসহ ৫ সদস্যের পরিবার রবিত মারাকের।
জায়গা জমি, সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই তার। বন বিভাগের এক টুকরো জমিতে ১২ ফুট দীর্ঘ, ৯ ফুট প্রস্থ একটি দু’চালা একটি ঘর। ঘরে নেই চৌকি। নেই বিদ্যুৎ, কুপি বাতি জালিয়ে এ ঘরে গাদাগাদি করে পরিবারের লোকজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন রবিত মারাক। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পরে। রবিত মারাক শ্রম বিক্রি করে ও পাহাড় থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের জীবন- জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।
গত ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রবিত মারাক বাকাকুড়া বাজার থেকে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরছিল। এসময় বেপরোয়া গতির একটি ট্রলিগাড়ী তাকে ধাক্কা দিলে ভেঙে যায় হাটুর নিচে থেকে তার বাম পা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে রবিত মারাকের পায়ে পাঁচটি রিং পড়ানো হয়। স্থানীয় লোকজনের আর্থিক সহযোগিতায় প্রায় ৪ মাস ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলে।
পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসায় উন্নতি না হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারনে পরিবারের লোকজন পঙ্গুতে না নিয়ে তাকে নিয়ে আসেন বাড়িতে। এরপর থেকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। চিকিৎসকরা যেসব ওষুধপত্র লিখে দিয়েছিল তাও খাওয়াতে পারেনি তার পরিবারের লোকজন। শুধু তাই নয় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রবিত মারাক আহত হওয়ায় পরিবারটির দিন কাটছে এখন অনাহারে অর্ধাহারে।
রবিত মারাকের স্ত্রী প্রনতী সাংমা বলেন, তিনি তার স্বামীর চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে প্রতিদিন যাচ্ছেন। কিন্তু কোন কাজে আসছে না। কেউ ১/ ২ শ টাকা দেয়। সে টাকা দিয়ে চিকিৎসাতো দুরের কথা পেটের ক্ষুধা নিবারন করাও সম্ভব হচ্ছে না। তারা কোন দিন খেয়ে আবার কোন দিন না খেয়ে দিন পার করছেন।
কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, তাকে বিষয়টি আগে কেউ জানান নি। তিনি খোঁজখবর নেবেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুঁইয়া বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করেছি। এ বিষয়ে আরো সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম জানান, ওই পরিবারের খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। তিনি অন্যান্য সহায়তার ও আশ্বাস দেন।
রবিত মারাকের চিকিৎসায় বৃত্তবানদের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন এই পরিবারটি।