শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের চেঙ্গুরিয়া আনছার আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ প্রতি বুধবার করে গরুর হাট বসছে। ফলে ওই দিন নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হচ্ছে এবং পাঠদান ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে বিঘ্নিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী প্রয়াত আনছার আলীর প্রচেষ্টায় চেঙ্গুরিয়া আনছার আলী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে শেরপুর-ঝিনাইগাতী সড়কের কালিবাড়ী বাজারসংলগ্ন স্থানে ৫৮ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চলমান এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৪ ও ৬১৫ জন। বিদ্যালয়টির ঠিক সামনে সরকারের ২৫ শতাংশ খাস জমি রয়েছে। এ জমিতে দীর্ঘ দিন ধানের বাজার বসত। কিন্তু ২০০৯ সালে উপজেলা প্রশাসন এ জমিটি ধানের বাজারের পরিবর্তে গরুর হাট হিসেবে ইজারা দেন। সেই থেকে প্রতি বুধবার এখানে গরুর হাট বসে আসছে। প্রথম দিকে সমস্যা না হলেও দিন দিন গরুর হাটটি অনেক বড় হয়েছে। জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতা এ হাটে গরু নিয়ে আসেন। সাধারণত বিদ্যালয় ছুটি হয় বিকেল চারটায়। কিন্তু বুধবার দিন হাট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চেঁচামেচি আর উচ্চ স্বরে গরুর ‘হাম্বা’ রবের কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদান করা সম্ভব হয় না। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেলা দুইটার দিকে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। এতে শিক্ষকদের পাঠদানে বিঘ্নিত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাটের নির্ধারিত জমিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বর্তমানে গরু বিক্রেতারা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিদ্যালয়ে প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের মূল ভবনের বারান্দা পর্যন্ত গরুর হাট বসেছে। বিক্রির জন্য পুরো মাঠ জুড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে পাঁচশতাধিক গরু। এসব গরুর মল-মূত্র ও বর্জ্য বিদ্যালয় মাঠের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে হাটের দিন দুপুরের পর বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়ছেন। এ সময় বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। বিদ্যালয়ের কার্যালয়সহ সকল শ্রেণিকক্ষ ছিল তালাবদ্ধ। বিদ্যালয়ের বারান্দা-সংলগ্নস্থানে চেয়ার-টেবিল পেতে ইজারাদারের লোকজন টোল আদায় করছেন।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাসিম, মার্জিয়া আক্তার ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামান্না সিদ্দিকাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, প্রতি বুধবার বিকেল দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। দুইটার দিকে গরুসহ বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতা হাটে জমায়েত হলে হই-হুল্লোড় ও শব্দে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ থাকে না। লোকজন বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে ধূমপান করেন। যাতায়াতে সমস্যা হয়। ফলে তাদের পড়ালেখায় ক্ষতি হয়। বিশেষ করে বুধবার বিকেলে পরীক্ষা থাকলে তাদের চরম দুর্ভোগ ও বিপাকে পড়তে হয়। এ ছাড়া হাটের দিন তারা বিদ্যালয় মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না। হাটের পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে ইজারাদারের লোকজন গরুর মল-মূত্র পরিষ্কার করলেও মাঠে দুর্গন্ধ থেকে যায়। শিক্ষার্থীরা গরুর হাটটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলী বলেন, গরুর হাট এবং বিদ্যালয় মাঠের মধ্যে কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় প্রতি বুধবার হাটের দিন বিপুলসংখ্যক গরু বিদ্যালয় মাঠে রেখে বিক্রি করা হয়। হাটের কারণে ওইদিন নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয় ছুটি দিতে হয়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষাসহ পড়ালেখায় বিঘœ ঘটছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে গরুর হাটটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করবেন বলে জানান।
ইজারাদার মো. কমল উদ্দিন বিদ্যালয় মাঠে গরুর হাট বসানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সরকারের নির্ধারিত জমিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তারা বিদ্যালয় মাঠে গরু রাখছেন। তবে বিদ্যালয়ের পরিবেশের ওপর যাতে কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে তার জন্য হাটের পরদিন সকালেই পুরো বিদ্যালয় মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যালয় মাঠ থেকে হাট স্থানান্তরের বিষয়ে কেউ তার কাছে আবেদন করেনি। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে আবেদন পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেরপুর টাইমস - শেরপুর জেলাভিত্তিক প্রথম অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। শেরপুরের সংবাদের প্রাধান্য দিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পাঠকের কাছে তুলে ধরাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এছাড়া তারুণ্য ভিত্তিক ইতিবাচক গল্প, শেরপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও পর্যটনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা অঙ্গিকারাবদ্ধ।