‘সারা দিন পাড়া ঘুইরে ভিক্ষা কইরে শুইলো ব্যাদনা ওঠে। হুতলে আর চেতন পায় না। কিন্তু কয়ডা দিন ধুইরে ঠান্ডার জ্বালায় ঘুম ধরে না। আইজ র্যাইত নয়টায় ট্যাশ কইরে ইউএনও স্যার আমগোর ঘরে ঢুকছে। উনি আমগোর দুখের কতা হুইন্না খুবই কষ্ট পাইলেন। পরে আমারে একখান কম্বল দিয়া চইলা গেলেন। এহন শীতের জ্বালায় আর মরব না।’ কথাগুলো শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরিপুর ইউনিয়নের পূর্ব গজারীকুড়া এলাকার বৃদ্ধা সফুরা বেওয়ার (৭০)।
এ উপজেলায় গত মঙ্গলবার থেকে ঘন কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। তাই প্রচন্ড শীতের রাতে এলাকার গরিব মানুষগুলোর কষ্ট নিজের চোখে দেখতে বের হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ। সঙ্গে নিয়ে যান সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া কিছু কম্বল। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত আট থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ঘুরে তিনি প্রকৃত গরিব মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন। আর যাদের বেশি প্রয়োজন এমন গরিব দুস্থদের কম্বল দেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ইউএনও রুবেল মাহমুদ তার গাড়িচালক তোফাজ্বল হোসেন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের এমএলএসএস সাহেব আলীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি রওনা হন। কখনো গাড়িতে, কখনো হেঁটে তিনি উপজেলার তালতলা, পশ্চিম গজারীকুড়া, পূর্ব গজারীকুড়া, গিলাগাছা ধারাপানি এলাকার দরিদ্র মানুষদের ঘরে গিয়ে কথা বলেন।
বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে তৈরি ছাপড়া গিলাগাছা ধারা পানি গ্রামের দিনমজুর শাহ জামালের। তিনি কম্বল পেয়ে বলেন, ‘প্রচন্ড শীতে খুব কষ্ট পাইতেছিলাম। এখন একখান কম্বল পাইয়া শীতের অত্যাচার থাইকা বাঁচতে পারুম। আল্লায় স্যারের মঙ্গল করুক।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, শীতার্ত দরিদ্র মানুষের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে ২ হাজার ১০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এর পরেও গ্রামের গরিব মানুষের শীত-কষ্ট নিজের চোখে দেখার জন্যই বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাদের কম্বল প্রয়োজন, তাদেরকেই কম্বল দিয়েছি।