“এখন আমাদের পানির খুবই অভাব, সরকার আমাদের জন্য কোন কিছুই করছে না। অনেক বার সাহায্যের কথা বললেও আমরা কোন সাহায্যই পাচ্ছি না। এখন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যাতে আমাদের পানির অভাব দূর করে দেন”। এভাবে কথাগুলো বৃহস্পতিবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলছিলেন গৃহিণী বর্ষা (২৫)। তার বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের ছোট গজনী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বুদ্ধিসন সাংমার স্ত্রী। কথা গুলো শুধু তারই নয়, উপজেলার সীমান্তে বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষেরই কথা।
এ উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খাল, বিল, নদী, পুকুর ও জলাশয়গুলো প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে গেছে। ফলে সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলোতে খাওয়ার বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানান, পাহাড়ি গ্রামগুলোর মাটির নিচে পাথর থাকে। এখানে হস্তচালিত নলকূপ স্থাপন করা যায় না। তাই পানি তুলতে বসাতে হয় রিংওয়েল নলকূপ। কিন্তু এটি ব্যয়বহুল। তাই দরিদ্র গ্রমবাসীর পক্ষে এই নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না।
গ্রামবাসীরা আরো জানান, জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় খাওয়ার পানির সঙ্গে দৈনন্দিন ব্যবহারের পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি জনপদের এসব গ্রামবাসীকে এখন দূর-দূরান্তের নলকূপ থেকে আনতে হচ্ছে পানি। কোনো গ্রামের একটি নলকূপে পানি ওঠার সংবাদ পেলে ওই গ্রামসহ পানিসংকটে থাকা আশপাশের গ্রামবাসী ওই নলকূপে ভিড় করে।
এ উপজেলাতে পানির সংকটে থাকা এ গ্রামগুলো হচ্ছে উপজেলার তাওয়াকুচা, পানবর, গুরুচরণ দুধনই, ছোট গজনী, বড় গজনী, গান্ধিগাঁও, ফুলহাড়ি, বাকাকুড়া, হালচাটি, নওকুচি এবং নলকুড়া, ফাকরাবাদ, রাংটিয়া ও গৌরিপুর।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অসংখ্য হস্তচালিত নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ছোট গজনী গ্রামের একটি কূপ থেকে পানি তুলছেন আদিবাসী গৃহিণী। কারিতাস আলো ঘর প্রকল্পের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খাবার পানি সংগ্রহ করার জন্য কূপ থেকে পানি তুলছে।
কারিতাস আলো ঘর প্রকল্পের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আগস্টটিন ম্রং বলেন, এখন আমাদের অভাব। আপাত্তো কূপ গুলোতে পানি আছে। চৈত্র মাস শুরু হলে এক কলস পানি নেওয়ার জন্য প্রায় ৪কিলোমিটার দূরে যেতে হয়।
কাংশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, পাহাড়ি গ্রামবাসী অনেক দিন ধরেই বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে। সরকারি উদ্যোগে এসব এলাকায় ‘সেমি ডিপ টিউবওয়েল’ স্থাপন করা হলে পানির সংকট কমত।
উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশি বলেন, উপজেলার আদিবাসী-অধ্যুষিত পাহাড়ি জনপদে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। বিশেষ করে কাংশা ও নলকুড়া ইউনিয়নে এ সংকট তীব্র। এখানে জরুরি ভিত্তিতে ‘সেমি ডিপ টিউবওয়েল’ স্থাপনের জন্য তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানান। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরউজ্জামান বিশুদ্ধ পানিসংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, পানির সংকট সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ উপজেলার চারটি ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি উদ্যোগে ১২টি গভীর তারা নলকূপের বরাদ্দ এসেছে। তালিকা পেলেই খুব শীঘ্রই নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। তবে চাহিদার তুলনায় নলকূপ অপ্রতুল।