আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ধানের ফলনে কৃষকের মন ভরে গেছে। কিন্তু সেই ধান বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে গেলে কৃষকের আনন্দিত মুখ মলিন হয়ে যায়। ধান বিক্রি করে উৎপাদনের খরচ ওঠাতে পারছে না কৃষক। সারা বছর সংসার কীভাবে চালাবে চিন্তিত কৃষক। এ ধরণের এক অনিশ্চতায় মধ্যেই গত ২৭ মে খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়।
উপজেলার মহর উদ্দিন, বকুল, ইসমাইলসহ শতাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও এ উপজেলার ধানের বাজারদরে এখনো কোন প্রভাব পড়েনি। গতকাল রবিবার উপজেলা সদরে ধানের হাট-বাজারে প্রতি মণ মোটা ধান ৫০০ থেকে ৫৭০, মিনিকেট জাতের সরু ধান ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায় দরে কেনা বেচা হয়েছে।
ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক, ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে প্রতি মণ বোরো ধান ড়ে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের বাজার মন্দা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় বোরো মৌসুমে ৯০হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু উৎপাদিত হয়েছে ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হলেও কৃষকেরা খুশি হতে পারছেন না। সরকারীভাবে এ বছর ৪৩৩ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে।
ফুলহাড়ি গ্রামের কৃষক বকুল বলেন, হাল-চাষ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশক, সেচ ও কাটা-মাড়াই পর্যন্ত একরে প্রায় ৩৫হাজার টাকা খরচ হয়ছে। ধান পেয়েছে ৬২ মণ। ৫০৩ টাকা দরে ধান বিক্রি করে ঘরে উঠেছে ৩১ হাজার টাকা।
উপজেলা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দেবনাথের দেয়া তথ্য মতে, রবিবার এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত সরকারীভাবে খাদ্যগুদামে ১২৫ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে এবং ধান কেনা অব্যাহত আছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খলিলুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় সরকারিভাবে চাল ও ধান কেনা শুরু হয়েছে। আগের চেয়ে বাজার দর বেড়েছে। আশা করছি, ধানের দাম আরও কিছুটা হলেও বাড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ধানের বাজার কম হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। এ উপজেলায় যে পরিমাণ ধান কিনছে সরকার, ঘোষণা অণুযায়ী তার চেয়ে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়বে। তবে খুব শ্রীঘই ধানের বাজারদর বেড়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, প্রকৃত কৃষক যেন ধান বিক্রি করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্যে কাজ করা হচ্ছে। চালকল মালিক বা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে এক ছটাক ধান কেনা হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।