গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ওয়ানগালা। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্যে। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। আবার ওয়াানগালা উৎসব একশ ঢোলের উৎসব নামেও পরিচিত।
গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। নতুন ফল ও ফসল ঘরে উঠবে। তার আগে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে শস্যদেবতার প্রতি। গারো সম্প্রদায়ের এটাই চল। তাই শস্যদেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্যে নেচে-গেয়ে উদযাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব। একই সঙ্গে পরিবারে ভালবাসা, মন্ডলীর আনন্দ, সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করা হয় শস্যদেবতার কাছে। প্রতিবছরের মতো এবারও শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে এ সম্প্রদায়ের লোকেরা উৎসব করেছে। আজ রবিবার দিনব্যাপী মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্তরে ওই উৎসবের আয়োজন করে। সকাল নয়টায় থক্বা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বরিশাল ক্যাথলিক ধর্ম প্রদেশের বিশপের সেক্রেটারী খামাল ফাদার অনল টেরেন্স কস্তা সিএসসি। তাকে সহযোগিতা করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ফাদার সুবল কুজুর সিএসসি এবং সহকারী পাল পুরোহিত ফাদার আশীষ রোজারিও সিএসসি ।
উৎসবে ক্রুশচত্বরে বাণী পাঠ (মান্দিতে), খামালকে খুথুব ও থক্কা প্রদান, জনগণকে থক্ক্ দেয়া, পবিত্র খ্রীষ্টযাগ, দান সংগ্রহ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নকগাথা অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা করা হয়। গারো সম্প্রদায়ের কয়েকশত মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারোদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে র্যাফেল ড্র শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
ওয়ানগালা উৎসব কমিটির আহবায়ক মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ফাদার সুবল কুজুর সিএসসি জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হচ্ছে। সুপ্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য। উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে মেলা বসে।