শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীতে নির্মিত রাবার ড্যাম উপ-প্রকল্পের ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’ এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোমিনুর রশীদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নে নির্মিত রাবার ড্যাম সংলগ্ন এসব এলাকা পরিদর্শন করেন।
এর আগে সকাল দশটায় উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে মহারশি নদী থেকে রাবার ড্যাম উপ-প্রকল্পের মাধ্যমে নালিতাবাড়ী উপজেলায় পানি সরবরাহের বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোমিনুর রশীদ।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগ শেরপুরের উপ-পরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়নাল আবেদীন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির, উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক, নলকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. মজনু মিয়া, মহারশি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. শাহিনুর ইসলাম প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নে মহারশি নদীতে ২০১৫ সালে জাইকার অর্থায়নে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। রাবার ড্যাম প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট এলাকা প্রায় তিন হাজার একর জমি। কিন্তু এ রাবার ড্যামের সংরক্ষতি পানি দিয়ে এ উপজেলার প্রায় ১হাজার একর জমিতে বোরো চাষ করা হয়।
অথচ সম্প্রতি মহারশি নদীতে জাইকার প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে চার কিলোমিটার পানির পাইপ স্থাপন করা হবে। পাইপ স্থাপন শেষে এ উপজেলায় নতুন করে প্রায় দেড় হাজার একর জমি বোরো চাষাবাদের আওতায় আসবে। পাশাপাশি মহারশি নদীর রাবার ড্যামের মাধ্যমে সংরক্ষিত পানি পাশ্ববর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার প্রায় ৬০০ একর জমিতে বোরো ধান চাষে পানি সরবরাহ করা হবে।
এদিকে, পাশ্ববর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলায় পানি সরবারহ করার সংবাদে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, কৃষকরা নিজেদের নদীর পানি অন্য উপজেলায় দিবে না বলে অবস্থান নেন। এর পরিপেক্ষিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও কৃষকদের প্রকল্প সম্পর্কে অবগত করতে মতবিনিময় সভায় সভার আয়োজন করা হয়।
মতবিনিময় সভা শেষে উপজেলার মহারশি নদীতে নির্মিত রাবার ড্যাম উপ-প্রকল্পের ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’ এলাকা পরিদর্শনে যান তারা।
এসময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুর কবির সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে রাবার ড্যামের সংক্ষতি পানি নালার মাধ্যমে কৃষকের জমিতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি অপচয় হচ্ছে। বর্তমানে এ রাবার ড্যামের ক্যাচমেন্ট এলাকা হচ্ছে তিন হাজার একর জমি। কিন্তু ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’ এর মাধ্যমে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবারহ করা হলে অনেক পানি উদ্বৃত্ত হবে। তাতে ক্যাচমেন্ট এলাকা বৃদ্ধি হয়ে প্রায় ৫ হাজার একর জমিতে দাঁড়াবে। এছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের আধনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হবে, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা হবে, কৃষি বাজার স্থাপন করা হবে। এতে এ এলাকার কৃষি ও কৃষদের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক উন্নয়ন হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিতে অনেক উন্নয়ন হবে। আমাদের জমি চাষাবাদ শেষে মহারশি নদীর পানি উদ্বৃত্ত হলে পাশ্ববর্তী উপজেলার সরবারহ করা যাবে। এর আগে একটু পানিও সরবরাহকরা হবে হবে না।
জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, জাইকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাবার ড্যামের পানির অপচয় রোধ হবে। যদি এ উপজেলার কৃষকদের চাষাবাদে পানির চাহিদা পূরণ শেষে পানি উদ্বৃত্ত হয়। তাহলে অন্য এলাকায় পানি সরবারহের বিষয়টি দেখব।