ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরুর আগেই বলা হচ্ছিল-এই সিরিজে ফেভারিট বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে শুরুটা ফেভারিটের মতই করলো টাইগাররা।
মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। তামিম ইকবালের হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে ম্যাচটি তারা জিতেছে ৮ উইকেটে।
ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই বোঝা গিয়েছিল সেরা হচ্ছেন কে? সাকিব আল হাসান। বিচারকদের বিবেচনার জন্য দ্বিতীয় নামটি হয়তো তামিম ইকবালের (৮৪ রান) এসে থাকবে। কিন্তু ব্যাট এবং বল হাতে দারুণ অলরাউন্ড নৈপুন্য দেখানো সাকিব আল হাসানকে শেষ বিচারে সেরার জন্য বিবেচনায় আনা হবে- এটা ছিল যেন জানা কথা। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। সাকিব হলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
খেলার প্রথম ওভারেই তো জিম্বাবুয়ের কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন সাকিব। প্রথম ওভারের প্রথম এবং তৃতীয় বলে পরপর ফিরিয়ে দেন সলোমন মিরে এবং ক্রেইগ আরভিনকে। এরপর নিলেন আরও এক উইকেট। সাজঘরে ফিরিয়েছেন গ্রায়েম ক্রেমারকে। ১০ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে নিলেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট।
এরপর ব্যাট হাতে নামলেন তিন নম্বরে। গত কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, তিন নম্বরে ব্যাট করবেন সাকিব। আজ ম্যাচেও সেটা দেখা গেলো। তিন নম্বরে ব্যাট করলেন তিনি। ৪৬ বল খেলে ৩৭ রানের দারুণ এক কার্যকরি ইনিংস খেলেন তিনি। তামিম ইকবালের সঙ্গে গড়েন ৭৮ রানের দারুণ এক জুটি। যে জুটির ওপর দাঁড়িয়ে বাকি কাজটুকু শেষ করে দেন তামিম এবং মুশফিকুর রহীম।
বল হাতে ৩ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৩৭ রান করার কারণেই ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হলেন সাকিব আল হাসান। সেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে সাকিব বলেন, ‘শুরুতে উইকেট নেয়া ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সময় গড়ানোর সঙ্গে উইকেট ভালো হতে থাকবে। কারণ, শুরুতে উইকেট ছিল বেশ আদ্র। এ কারণে আমরা চিন্তা করেছিলাম, স্পিনাররা ভালো সুযোগ পেতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।’
জিম্বাবুয়েকে ১৭০ রানে অলআউট করতে সাকিব ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন। ব্যাট হাতে করেন ৩৭ রান। তবে ব্যাট হাতে শেষটা করেন তামিম। ৮৪ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশি ওপেনার। ২৮.৩ ওভারে ২ উইকেটে ১৭১ রান করে স্বাগতিকরা।
র্যাংকিংয়ের ১০ নম্বর দলের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে আগ্রাসী ছিল বাংলাদেশ। দুই বছরেরও বেশি সময় পর জাতীয় দলে ডাক পাওয়া এনামুল হক বিজয় ছোটখাটো ঝড় তোলেন। যদিও তাকে থামতে হয়েছে ১৯ রানে। তামিমের সঙ্গে তার উদ্বোধনী জুটি ছিল ৩০ রানের। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে সিকান্দার রাজাকে উইকেট দেন এনামুল। লেগ সাইডে ডিপে দাঁড়ানো ক্রেইগ আরভিন তার ক্যাচ ধরেন। চারটি বাউন্ডারি ছিল প্রায় তিন বছর পর ওয়ানডে দলে জায়গা পাওয়া এনামুলের।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করতে থাকেন তামিম-সাকিব জুটি। দলের স্কোর ১০০ ছাড়িয়ে নেন তারা দুজন। কিন্তু সিকান্দারের বলে এলবিডাব্লিউ হন সাকিব। জোরালো আবেদন আম্পায়ার নাকচ করে দিলে রিভিউ নেয় জিম্বাবুয়ে, সিদ্ধান্ত যায় তাদের পক্ষে। ভাঙে ৭৮ রানের এই জুটি। ৪৬ বলের ইনিংসে সাকিব মারেন ৫টি বাউন্ডারি। তিনি আউট হওয়ার পর তামিম ৬৬ বলে পান ৩৯তম ফিফটি। ৯৩ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ে ইনিংস সেরা রান করেন তিনি। মুশফিক খেলছিলেন ১৪ রানে।
বাংলাদেশের দুটি উইকেটই পেয়েছেন সিকান্দার।
এর আগে কুয়াশায় আচ্ছন্ন মিরপুরে সকালে টস জিতেই ফিল্ডিং নেন মাশরাফি মুর্তজা। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত বিফলে যায়নি। প্রথম ওভারে জিম্বাবুয়ের দুই উইকেট তুলে নেন সাকিব। দ্বিতীয় বলে সলোমন মায়ার স্টাম্পিং হন। এক বল বিরতি দিয়ে সাকিব ফেরান ক্রেইগ আরভিনকে। মিড উইকেটে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ দেন জিম্বাবুয়ান ব্যাটসম্যান।
প্রথম ওভারে জোড়া আঘাতের পর বিপদ সামলানোর চেষ্টা করেন হ্যামিলটন মাসাকাদজা ও ব্রেন্ডন টেলর। তাদের প্রতিরোধ ভেঙে দেন মাশরাফি। ২৮ রানের জুটি গড়ে মাসাকাদজা (২৫) পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে টেলর ২৪ রানে মোস্তাফিজের শিকার হন। দলীয় ৮১ রানে জিম্বাবুয়ে তাদের পঞ্চম উইকেট হারায় সানজামুল ইসলামের কাছে। ম্যালকম ওয়ালার ১৩ রানে আউট হন।
ধুকতে থাকা জিম্বাবুয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে পিটার মুর ও সিকান্দার রাজার ৫০ রানের জুটিতে। ইনিংস সেরা ৫২ রানে সাকিব ও মুশফিকের যোগসাজশে রান আউট হন সিকান্দার। মুরের সঙ্গে অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমারের ৩০ রানের জুটি সর্বশেষ প্রতিরোধ গড়েছিল সফরকারী দলের পক্ষে। তাদের ৩০ রানের জুটি ভাঙার পর আর দাঁড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ৯ রানের ব্যবধানে শেষ চার উইকেট হারায় তারা। রুবেল দলের ৪৮তম ওভারে টানা দুটি উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান। মুরকে ৩৩ রানে ফেরানোর পর তেন্দাই চাতারাকে আউট করেন বাংলাদেশি পেসার। কিন্তু হ্যাটট্রিক হয়নি। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে মুজারাবানিকে আউট করে জিম্বাবুয়েকে গুটিয়ে দেন মোস্তাফিজ।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন সাকিব। মোস্তাফিজ ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ ২৯ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন। ৪১টি ডট বল দিয়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তিনি। আরেক পেসার রুবেল হোসেনও পেয়েছেন দুটি উইকেট।