আপনি ভাগ্যবতী, তবে আপনার ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের অনেকের বড় ফাঁড়া বা বিপদ আছে। এই ফাঁড়া কাটাতে হলে জ্বীনের মাধ্যমে সামান্য কিছু টাকার একটি চালান দিতে হবে। এ টাকায় জ্বীনের মাধ্যমেই মসজিদের ইমামের জন্য একটি জায়নামাজ কিনা হবে’।
এসব কথা বলতেই গত ১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী গ্রামের হবিরন বেগম (৫০) নামে এক নারীর নিজস্ব মোবাইলে ০১৩১৫-৩৯২১৭৪ নাম্বার থেকে ফোনেকল আসে। অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি নিজেকে জ্বীনের বাদশাহ (কোন এক মসজিদের বড় হুজুর) পরিচয় দিয়ে পরিবারের খোঁজখবর নেন।
এই জ্বীনের বাদশা আরও বলেন, আপাতত ৭০০ টাকা লাগবে। এই টাকাগুলো না দিলে পরিবারের সদস্যরা বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হবে, এমকি মারাও যেতে পারে। মোবাইলে এমন ভয়ভীতি দেখালে হবিরন বেগম জ্বীনের বাদশার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রতারকের দেওয়া একটি বিকাশ নাম্বারে পরিবারের সবার অজান্তে ৭০০ টাকা পাঠান। কথিত জ্বীনের বাদশার প্রতারণার জালে পড়ে জীবনের সব সঞ্চয় ও ছেলের আয়ের সব টাকাপয়সা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন ওই নারী।
হবিরন বেগম জানান, এর পর থেকে ওই প্রতারক জ্বীনের বাদশাহ প্রতি গভীর রাতে ফোন দিয়ে হবিরনের পরিবারের খোঁজ খবর নেন এবং তার কথামত চলতে নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে জ্বীনের বাদশা হবিরনকে বলে যে, তার কথা মতো না চললে তার ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা বড় ধরনের বিপদে পড়বেন এবং কেউ কেউ মারা যাবেন। এমন কথাবার্তা শুনে হবিরন বেগম ভয় পেয়ে যায়। সে আবেগের বশে জ্বীনের বাদশার কথা অনুযায়ী কাউকে না জানিয়ে কষ্টার্জিত জমানো অর্থসহ তার ছেলের আয়ের টাকা ও ধার দেনা করে কথিত জ্বীনের বাদশাহর দেওয়া বিকাশ নম্বরে চার ধাপে মোট ৮০ হাজার ৭০০ টাকা পাঠিয়ে আজ সর্বস্বান্ত হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
দিশেহারা হবিরন বেগম জানান, সে এবিষয়ে নকলা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। এছাড়া সিআইডি ও র্যাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করতে লিখিত অভিযোগ প্রস্তুত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ভুক্তভোগী ওই নারীর ছেলে সাদ্দাম হোসেন জানান, বহু কষ্টে জমানো টাকা খুইয়ে মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। প্রতারকের অবস্থান খোঁজে বেড় করতে মোবাইল ট্র্যাকিং এর জন্য সংশ্লিষ্ঠ এক কর্মকর্তাকে খরচা বাবদ প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা দিয়েছেন। তার বিশ্বাস তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ বিভাগ প্রতারক চক্রকে খোঁজে বের করতে পারবেন।
স্থানীয় শিক্ষার্থী কবির হোসেন তাজেল বলেন, হবিরন বেগম এলাকার অসহায়দের মধ্যে একজন। এমতাবস্থায় কথিত জ্বীনের বাদশাহ পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিকাশ নম্বর ব্যবহার করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধার করতে প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ঠ আইন শৃঙ্খলা বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
প্রতারনার ফাঁদে পড়া আরেক ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বানেশ্বরদী খন্দকার পাড়া এলাকার আসাদুজ্জামান জানান, মাত্র কয়েক মাস আগে তার স্ত্রীর কাছেও একই কায়দায় ৭৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক চক্র। তিনি বলেন, আমরা অল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ ও অশিক্ষিত। তাদের অশিক্ষার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকরা নারীদের গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অথবা পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে বিশেষ কায়দায় প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বানেশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও মানুষ এভাবে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। আমাদের এখানে একজন নারীও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, এই চক্রটি গ্রামের সহজ সরল মানুষদের টার্গেট করে। ফোনের ফাঁদে ফেলে টাকা পয়সা নিয়ে নেয়। কখনো জ্বীনের বাদশাহ আবার কখনো বড় হুজুর এমন পরিচয়ে তারা মানুষকে প্রতারণার জালে আটকায়।
এ ব্যাপারে নকলা থানার ওসি মুশফিকুর রহমান বলেন, এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। বিশেষ কায়দায় তারা সহজ সরল ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।