“ স্বামী-সন্তান হারানোর পরে গত ৪৮ বছর আমরা পহেলা বৈশাখ কি বুঝি নাই। “ এই বছর পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পুলিশ ভাইয়েরা আমগরে বাড়ীতে গিয়া বড় বড় রুই-কাতলা মাছ দিয়া আইছে। টেহা (টাকা) দিছে, কাপড় দিছে। আইজ গাড়ীতে কইরা শেরপুর নিয়া আইছে । বড় ডাক্তর আমগরে দেখলো। ওষুদ দিল। হাজার হাজার শিশু আমগরে দাঁড়ায়া সম্মান দিল। ভাল খাওয়ন পাইলাম। খুব খুশি লাগতাছে। মনে হইতাছে অনেকদিন পরে স্বাধীনতার স্বাদ পাইতাছি।”
শেরপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা পুলিশ আয়োজিত শহীদ জায়াদের সংবর্ধনা ও বৈশাখী শিশু উৎসবে অংশ নিতে এসে এভাবেই নিজের অনুভ’তি ব্যাক্ত করলেন সোহাগপুর বিধবা পল্লীর শহীদ জায়া হাফিজা (৬৬) বেওয়া। ১৯৭১ এর ২৫ জুলাই সোহাগপুর গণহত্যায় যিনি স্বামী-সন্তান-দেবরসহ পরিবারের ৮ সদস্যকে হারিয়েছেন। সেদিন ওই গ্রামের ১৮৭ জনকে হত্যা করা হয়।
১৪ এপ্রিল রোববার সকালে ১৪২৬ বাংলা নতুন বছরকে বরণ করতে জেলা পুলিশ ভিন্নধর্মী আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ আলেয়া ফেরদৌসি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম। এদিন ২১ শহীদ জায়াকে ক্রেষ্ট- উত্তরীয় দিয়ে সংবর্ধনা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় ।
বৈশাখী শিশু উৎসবে জেলা সদরের ২১টি মাধ্যমিক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষক অংশ নেয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধ ও সোহাগপুর গণহত্যায় শহীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে সোহাগপুরের পৈশাচিক গণহত্যায় নিহত শহীদ জায়াদের করুণ ইতিহাস অভিনয় করে দেখায় স্কুল শিক্ষার্থীরা । এসময় অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
শিশু উৎসবে শিশুরা নাচ-গান-আবৃত্তি-রম্য বিতর্ক, লোকজ,-আদিবাসী সম্প্রদায়ের নৃত্য গান, যেমন খুশি তেমন সাঁজো, সার্কাস ও সাপখেলাসহ নানা ধরনের আয়োজন অংশ নেয়। চমৎকার এ আয়োজনকে ঘিরে বিকেল পর্যন্ত পুলিশ লাইন মাঠ ছিল উৎসবমূখর।
এর আগে উপস্থিত সকল শিশুদের নাড়–-মুড়ি, জিলেপি, বাতাসা ও আইসক্রিম দিয়ে আপ্যায়ন করান হয়।
বিকেলে জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এসময় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, মূখ্য বিচারিক হাকিম সুদীপ্ত দাস, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. বিল্লাল হোসেন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো, জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ। অনুষ্ঠান আয়োজনে সহয়োগিতা করে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, ড্রিস্টিক্ট ডিবেট ফেডারেশন।
ভিন্নধর্মী আয়োজনের এ বর্ষবরণ উৎসব সর্ম্পকে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, বাঙ্গালীর অস্তিত্ব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমরা আমাদের প্রিয় দেশ পেতাম না। দেশ স্বাধীন না হলে পহেলা বৈশাখ পালনের কথা আমরা কল্পনাও করতে পারতাম না। তিনি বলেন, শহীদদের কাছে আমরা ঋণী। সেই দায়বদ্ধতা থেকে পুলিশ বিভাগ ভিন্নধর্মী বর্ষবরণের ব্যবস্থা করেছে।
হুইপ আতিউর রহমান আতিক বলেন, পুলিশ বিভাগের এ আয়োজনে সবাই মুগ্ধ হয়েছে। এ ধরনের আয়োজন শিশুদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।