জিয়াউর রহমানকে ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনোক্রমে লেখা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আজকে যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছেন, ইতিহাস যারা লেখবেন সত্যকে মেনে নিয়ে লেখবেন। এদেশে ২৫ মার্চের আগে স্বাধিকারের আন্দোলন হয়েছে, স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন হয়েছে, পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দালন হয়েছে কিন্তু জিয়াউর রহমানই সশ্বস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছেন।’
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারী) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের যৌথ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জেড ফোর্সের অধিনায়ক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম পদক বাতিলের প্রতিবাদে এই আলোচনা সভা হয়।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তাকে (জিয়াউর রহমান) নিয়ে টানাটানি।আগুন নিয়ে খেলছেন। আপনাদের হাত পুড়ে যাবে, ছাঁই হয়ে যাবে। এই খেতাব কেউ দেয় নাই, এই খেতাব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ যারা খেতাব পেয়েছেন তারা প্রত্যেকে অর্জন করেছেন। এই খেতাবের ওপরে হাত দেয়ার কোনো অধিকার কারো নেই।’
তিনি বলেন, ‘আল-জাজিরা তারা একটা রিপোর্ট দিয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে নাকচ করে দিলেন। যদি ওই রিপোর্টের বিষয়বস্তুগুলো যদি মিথ্যা হয় তাহলে সরকারের দায়িত্ব ছিল এই সম্বন্ধে প্রতিবাদ করা। কিন্তু তারা বিষয়বস্তুর মধ্যে যান নাই শুধু রাজনৈতিকভাবে নাকচ করে দিয়েছে। এটাই কী শেষ। দি ইকোনোমিস্ট আরও এক স্টেপ সামনে গিয়ে যে লেখা লিখেছে কই এখন পর্যন্ত সরকার থেকে প্রতিবাদ করার সাহস পায় নাই। ডয়েচে ভ্যালী এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাক্ষাতকারে একটি প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন নাই। কারণ তার কাছে জবাব নাই। অতত্রব এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নাই।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের খেতাবটা কিন্তু যুদ্ধের। দেশটা কিন্তু ভাষণে স্বাধীন হয় নাই, যুদ্ধে স্বাধীন হয়েছে। কিসের যুদ্ধ ছিল? গণতন্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। তা আমাদের এই গণতন্ত্র বক্তৃতায় আসবে না, যুদ্ধে আনতে হবে।’
‘সেই যুদ্ধটাই আমাদেরকে শুরু করতে হবে। সেই যুদ্ধের ফলাফল হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’, যোগ করেন তিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি তো সাক্ষী আছি। অমিত বিক্রমে জেড ফোর্স যুদ্ধ করেছে, মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সবচাইতে বেশি সাহসিকতা পদক অর্জন করেছে, সবচাইতে বেশি মানুষ জেড ফোর্সের সৈনিকেরা জীবন দিয়েছে এদেশে স্বাধীনতার জন্যে। অথচ তার কমান্ডারের একটি খেতাব যা দেয়া হয়েছে সেটি এখন ছিনিয়ে নেবার জন্যে কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজাকার শব্দটি অত্যন্ত ঘৃনিত। আরেক শব্দ ঘৃনিত হওয়ার পথে। ইতিমধ্যে ঘৃনিত হয়ে গিয়েছে যার নাম জামুকা। নব্য রাজাকারের দল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায়। যুদ্ধ কত ভয়াবহ এই জামুকা-ফামুকা কল্পনাও করতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তরে শ্লোগান ছিল-বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। আবারো সময় এসেছে বীর বাঙালি জেগে উঠো, এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করো। জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানকে আবার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমরা বর্তমান সরকার যদিও নির্বাচিত না, তাদেরকে অনুরোধ করব, এই ধরনের ঘৃণ্য উদ্যোগ নিয়ে জিয়াউর রহমানের মতো সেরা মুক্তিযোদ্ধার খেতাব নিয়ে টানাটানি করে নিজেরা নব্য রাজাকারের পরিণত হবেন না। এই ঝুঁকি নেবেন না আপনারা। অনাগত প্রজন্ম আপনাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখবে। আজকে থেকে ১০০ বছর পরে কে চিনবে কে জামকুা, কে মন্ত্রী কে কি ছিল। কিন্তু সেখানে জিয়াউর রহমান এবং এসব মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’ স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংরক্ষিত করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও আহ্বানও জানান হাফিজ।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমি শহীদ জিয়াউর রহমানের পক্ষে। আমার মতে জিয়াউর রহমান বীর পুরুষদের একজন, খুনিদের বিপক্ষে। তুমি কে? এই খেতাব কেড়ে নেয়ার প্রস্তাব দেবার তুমি কে? তুমি তো যুদ্ধ করে নাই। বুকের রক্ত ঢেলে দিতে যারা রনাঙ্গনে ছিল তারা সেই বীর উত্তম, বীর প্রতীক, বীর বিক্রম। তুমি কে- একথা আপনাদের সকলকে এখন বেশি বেশি করে বলতে হবে। আজ থেকে আমরা শপথ করি- আমরা জিজ্ঞাসা করব, তুমি কে?’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের চক্ষুশূল মনে করে, এই সরকার রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মান দিতে জানে না, এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি, এই সরকার মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না।’
সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আালাল, শিরিন সুলতানা, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, গণফোরামের মোশতাক আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের মকসুদ আলী মঙ্গোলিয়া, আবদুল খালেক, ফরিদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের কালাম ফয়েজী, রায়হান আল মাহমুদ, মাজহারুল ইসলাম, সালেহা আখতার প্রমুখ।