শেরপুর ও কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজীবপুরের লোকজনও চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষের ভরসা এই হাসপাতাল। ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি সেখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
এরপর কেটে গেছে ৮ বছর। অথচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি কিছুই। ফলে তালাবদ্ধ রয়েছে ইউনিটটি। অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে লাইফ সাপোর্টের ভেন্টিলেটর, মনিটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিছানাসহ অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। আইসিইউ না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের স্থানান্তর করা হচ্ছে ময়মনসিংহ ও ঢাকায়। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মুমূর্ষু রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না থাকায় আইসিইউ ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে আট বছর ধরে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। প্রতিদিন এ হাসপাতালে শত শত রোগী সেবা নিতে আসে। কিন্তু জরুরি রোগীদের অতিপ্রয়োজনীয় আইসিইউ ও এইচডিইউর সাপোর্ট না থাকায় তাদের পাঠাতে হয় ময়মনসিংহ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অনেক সময় ওই সব হাসপাতালে পৌঁছার আগেই ঝরে যায় অনেকের প্রাণ।
জামালপুর শহীদ হারুন সড়কের বাসিন্দা অনিমেষ সাহা বলেন, তার ছেলে ডাক্তার অভিজিৎ সাহা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। ডাক্তার তাকে আইসিইউ সাপোর্টের পরামর্শ দেন। কিন্তু জামালপুরে আইসিইউ ইউনিট চালু না থাকায় দ্রুত তাকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, আট বছর ধরে পড়ে রয়েছে আইসিইউ ইউনিটটি। যার ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি। অপরদিকে আইসিইউর সাপোর্ট না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অনেক রোগী। ইউনিটটি দ্রুত চালু করা প্রয়োজন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, আইসিইউ ইউনিট চালু করতে কমপক্ষে ৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ১৫ জন সিনিয়র নার্স ও লোকবলসহ আলাদা প্যাথলজি বিভাগ থাকতে হবে। এর কোনোটাই নেই এ হাসপাতালে।
তিনি আরও বলেন, আইসিইউ ইউনিটের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো সাড়া মেলেনি। তা ছাড়া আট বছর আগে আনা যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা ঠিক আছে কি না তা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে চিঠি পাঠানো হলেও তারও কোনো সদুত্তর মেলেনি।