একের পর এক নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে। এবার হয়তো এই গুঞ্জন সত্যি হতে চলছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে জেলা প্রশাসকের অনৈতিক কর্মের একটি ভিডিও। যা বর্তমানে জামালপুরের ‘টক অব দ্যা টাউন’।
নিজ অফিস কক্ষে ডিসি অফিসের এক নারী কর্মচারীর সাথে এমন ভিডিও প্রকাশ পাওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিওটি পোস্ট কর হয়। তবে শুক্রবার সকাল থেকে ওই আইডিতে আর সেই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার আগেই ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারের বিভিন্ন গ্রুপে তা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক নারীর সঙ্গে ডিসি আহমেদ কবীরের আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তদন্ত করবে। এখন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করছেন। একইসঙ্গে ভিডিওটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন।
আজ শনিবার (২৪ আগস্ট) বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত আছেন বলে জানিয়েছেন।
সচিব বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখছি। দু-এক দিনের মধ্যে এটি সমাধান হবে।’
জানা গেছে, শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটি। তাই অফিস খুললে বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করবে মাঠ প্রশাসনের দেখভালের দায়িত্ব থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গাফফার খান ( জেলা ও মাঠপ্রশাসন অনুবিভাগ) জানান, তারা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছেন এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা ঘটনাটি তদন্ত করছে। রবিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
ঘটনাটি নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছিল, ভিডিওটি অফিসের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি) ধারণ করা। কিন্তু নিজের অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরার সামনে এমন কাজ কেনো করতে যাবেন? এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেলো ভিন্ন কথা। আসলে ওই রুমে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিলোই না। ভিডিওটি ধারণ করা হয় গোপন ক্যামেরায়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অফিস কক্ষের পাশের ওই রুমটিতে আগে বিশেষ মিটিং করতেন ডিসি। পরে টেবিল চেয়ার সরিয়ে সেখানে খাট বসানো হয়। বলা হয়, রুমে তিনি বিশ্রাম নিবেন।
এদিকে ওই নারী সঙ্গে ডিসির সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে যে, অফিস সহায়ক হলেও তার খবরদারি চালাতো সবার সঙ্গে। তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে অফিসের কর্মীদের মধ্যে কেউ ওই রুমে গোপন ক্যামেরা সেট করেন। আর তাতেই ধরা পড়ে বিশ্রাম রুমে ডিসির আপত্তিকর ভিডিও।
৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে যে কক্ষটি দেখা যাচ্ছে সেটি জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অফিস কক্ষে তার চেয়ারের ঠিক ডান পাশের ছোট একটি কক্ষ। ছোট এই কক্ষটিতে একটি ছোট খাট বসানো হয়েছে। কক্ষটি বেশ পরিপাটি দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটিতে পুরুষ ব্যক্তিটিই জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। আর যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তিনি এই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেই সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া একই অফিসের অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা।
তবে ভিডিওটি বানানো বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে জেলা সার্কিট হাউজে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন তিনি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। আপনারা আমাকে একটু সময় দিবেন। প্রকৃত ঘটনা জানতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’
এ সময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করেন।
এছাড়া ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি একটি সাজানো ভিডিও। একটি হ্যাকার গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছিল। আমি বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি। বানোয়াট ভিডিওটি একটি ফেক আইডি থেকে পোস্ট দেয়া হয়।’
তবে ভিডিওটিতে দেখানো কক্ষটি তার অফিসের বিশ্রাম নেওয়ার কক্ষ এবং ভিডিওর ওই নারী তার কার্যালয়ের ‘অফিস সহায়ক’ হিসেবে কর্মরত বলে তিনি নিশ্চিত করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্যও অনুরোধ করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসনের লোকজন জোর করে উপস্থিত সাংবাদিকদের অনেকের ফোন থেকে আলোচিত ভিডিওটিও মুছে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা।
জামালপুরের নারী নেত্রী এডভোকেট শামীম আরা বলেন, জেলার সরকারি শীর্ষ একজন কর্মকর্তার কাছে নানা সমস্যা নিয়ে নারীরা তার কার্যালয়ে যান। নিরাপত্তাও চান তার কাছে। কিন্তু রক্ষক যদি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেন তাহলে নারীরা কোথায় নিরাপদ। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। এ ঘটনায় জামালপুরের নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসি সাংবাদিকদের বলেন, জামালপুরের জেলা প্রশাসকের একটি ভিডিও ভাইরালের খবর তিনি শুনেছেন। যদি ঘটনা সঠিক হয়, তবে সেটা ন্যাক্কারজনক। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে।