সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৪২ তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপণী অনুষ্ঠান ‘র্যাগ ডে’ তে নাচের পরিবেশনা ও মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবহার নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশে ও দেশের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের একাংশ দাবি করেছে।
অনুষ্ঠানের প্রথমদিনে টি-শার্টে আপত্তিকর লেখালেখি ও ছবি এবং মুক্তমঞ্চে হিন্দি গানের সাথে যুগল নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশজুড়ে সকল মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এছাড়া অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চের সামনেসহ এর আশেপাশের এলাকায় মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবহারে ক্ষুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের র্যাগ রাজা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সময় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আসতেন, তাদের কাছে আমরা ভালো মানুষ হওয়ার শপথ নিতাম। ঘোড়ার গাড়িতে চড়া, র্যালি, নাটক অভিনয় ছিলো অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ। আমরা রক্তদান, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে স্মরণিকা প্রকাশের মতো ভালো কাজগুলো বেশি করতাম। মূল্যবোধের জায়গাটাকে বেশী গুরুত্ব দিতাম। হয়তো আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি আমাদের সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ বলে বর্তমানে এগুলো ঘটছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মারুফ মল্লিক বলেন, আমাদের সময় নানা ধরনের সংকট ছিল। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি মান বজায় রাখতে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে যা দেখছি তা খুবই হতাশাজনক। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে এটা আশা করা যায় না। অশ্লীলতা, মানহীন কথোপোকথন কখনই আনন্দ প্রকাশের মাধ্যম হতে পারে না।
মাদকের অবাধ ব্যবহার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, ‘র্যাগ ডে’সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলোতে মাদকের অবাধ ব্যবহার আমাদের নৈতিকতার স্থলন। জাহাঙ্গীরনগরের এই অবস্থা আমাকে বিষণ্ন করে। মনে হয় আমরা আমাদের গর্বের জায়গাটা দিন দিন হারিয়ে ফেলছি। এ ব্যাপারে সকলেরই ভাবা উচিত।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দীক বলেন, খুব অবাক হয়েছি র্যাগ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সেন্ট্রাল ফিল্ড, মুক্তমঞ্চসহ এর আশেপাশের এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবাধে মাদক গ্রহণ করতে দেখে। মাদকের অবাধ ব্যবহারের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী মাদক সেবনে প্ররোচিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত আশংকাজনক ব্যাপার। ক্যাম্পাসে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত।’
অনুষ্ঠানে মাদক দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার নিয়ে জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের আহবায়ক ইসমাইল হোসাইন তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘মাদক গ্রহণের কোনো ঘটনা আমার চোখে পড়ে নাই। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে যারা এর সাথে জড়িত তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তা করেছে। র্যাগ কমিটি এর সাথে জড়িত নয়।’
এছাড়া ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব অনেক আগে শেষ হলেও র্যাগ অনুষ্ঠানের অযুহাতে অনেকেই হলের সিট দখল করে রেখেছেন। এ বিষয়ে আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘যারা এখোনো হলে আছে তাদের ছাত্রত্ব আছে বলেই অবস্থান করছে। আশা করি খুব দ্রুতই সিট ছেড়ে দিবে ও সংকট দূর হবে।’
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্বের মেয়াদ অনেক আগে শেষ হলেও এখনো অনেকেই হলে অবস্থান করছেন। এতে হলগুলোতে সিট সংকট তৈরী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের গণরুমে অবস্থান করতে হচ্ছে ও ৫০ ব্যাচকে অনলাইনে পাঠদান করতে হচ্ছে।
#বিডি২৪লাইভ