প্রেসরিলিজ : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিধানগুলো নিয়ে আলাদা করে বাংলা ভাষায় নতুন আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না স্বারিত লিখিত প্রস্তাবনায় জানান- গত ২৪শে আগস্ট ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্প’ প্রসঙ্গে কমিশন কতৃক আয়োজিত সংলাপেই বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট)- নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘জাতীয় পরিষদ’ গঠন করে বিধি-বিধানগুলো সংস্কার করার প্রস্তাব দেয়।
৬ই জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দে প্রস্তাবিত উক্ত ‘জাতীয় পরিষদ’ এর আইনগত রুপদান পরবর্তী রাজনৈতিক দল সমূহের সমন্বিত সভার মতামতের মধ্যে দিয়ে ‘রাজনৈতিক দল সমূহের নিবন্ধন আইন ২০২০’ কমিশন প্রদত্ত খসড়া আইনটি চুড়ান্তভাবে গৃহীত হওয়ার দাবী জানায় মুক্তিজোট।
প্রসঙ্গতঃ গত ২৪শে আগস্ট ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্প’ প্রসঙ্গে কমিশন কতৃক আয়োজিত সংলাপেই বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) এর দেওয়া প্রস্তাবনীর ‘জাতীয় পরিষদ’- রাজনৈতিক দলসহ যারা মতামত দিচ্ছেন এবং বিচার বিশ্লেষনপূর্বক তা গৃহীত বা বিধি হিসেবে প্রণয়ন করবেন, তন্মধ্যে প্রত্য রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা অভিজ্ঞান যেমন থাকে কেবল রাজনৈতিক দল সমূহের তেমনি বিধি-বিধানগুলো প্রত্যভাবে বহনও করতে হয় প্রধানত রাজনৈতিক দলসমূহকেই এবং তা কোনো একটি দল নয় বরং সব দলকেই।
যেকোনো প্রয়োজনে যে কোনো সময় যে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে ডেকে নির্বাচন কমিশন বসতেই পারেন পান্তরে বিধি মোতাবেক ((Representation of the People Order, 1972 এর90F(1)( e)) রাজনৈতিক দলগুলোও তা পারে। কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্কের বিধিবদ্ধতায় সমন্বিত রূপ বা যৌথ করণের শর্ত বিযুক্ত থাকায় তা অনানুষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে নির্দিষ্ট হয়ে পড়ে। অথচ বিধিগুলো প্রণীত হওয়ার পূর্বে সম্মিলিত বা যৌথের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শর্ত থাকছে না তথা বহনের েেত্র সম্মিলিত হলেও আনুষ্ঠানিক েেত্র কোনো সমন্বিত বা যৌথ করণের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনুপস্থিত বা প্রাতিষ্ঠানিক শর্ত বিযুক্ত। এতে করে বিধিগুলো যদি বাস্তবতা বিবর্জিত বা বাজে কথার ফুলের চাষও হয়ে থাকে তবুও তা বাস্তবায়িত না হওয়ার ব্যর্থতা কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর কাঁধেই বর্তায়।
তাই আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কারসহ তার বিধি-বিধান প্রসঙ্গে সর্বাগ্রে নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপটাই এসে পড়ে। বিশেষতঃ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হওয়া তথা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির শর্ত ধরেই পারস্পরিক সম্পর্কের প্রাতিষ্ঠানিকিকরণের শর্তটা এসে গেছে। কারণ যৌথ বা প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক স্বীকৃত হওয়া মাত্রই উক্ত প্রাসঙ্গিকতায় গৃহীত যাবতীয় বিধি-বিধান সংস্কার বা গ্রহন বর্জন- সেই প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের অনুবর্তীতায় নির্দিষ্ট হতে হয়। তা না হওয়ায় এবং যতণ তা না হবে ততণ পর্যন্ত তা প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্যে সংজ্ঞায়িত হতে পারে না। পান্তরে, এই নিবন্ধন যা তার অর্জন হলেও কেবল একতরফা বিধিবিধান বা নির্দেশ পালনের এই বাধ্যবাধকতা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আমলাতান্ত্রিক মুচলেকার মত অমর্যাদাকর হয়ে থাকবে।
এক কথায়, প্রত্য জনসম্পৃক্ত রাজনীতিতে কেবল রাজনৈতিক দলগুলো থাকে বলেই সে প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা বা বাস্তবনিষ্ঠতা তাঁদেরই থাকে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রণীত এ সংশ্লিষ্ট কোন বিধি শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকেই বহন করতে হয় আর যেহেতু তা কোনো একটি বিশেষ দল নয় বরং সকল দলকেই বহন করতে হয় তাই তা প্রনীত হওয়ার পূর্বে সমন্বিত সভা মারফত সম্পন্ন হলেই সেটা অধিকতর বাস্তবসম্মত বা যথাযথ হতে পারে এবং নিবন্ধন শর্তে একতরফা বিধি প্রণীত হওয়ার পথ ধরে ও যথারীতি তা বহন করার বাধ্যবাধকতা ভিন্নার্থে- রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ‘আমলাতান্ত্রিক মুচলেকা’ দেয়ার সমার্থক হয়ে ওঠে অথচ ‘দেশ যাঁরা চালান দলও তাঁরাই চালান’।
সেেেত্র, নির্বাচন কমিশন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের যৌথ বা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আসতে পারে ‘জাতীয় পরিষদ’ গঠনের মধ্যে দিয়ে। এেেত্র নির্বাচন কমিশন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সমূহের পারস্পরিক এই যৌথ সভা বা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তথা জাতীয় পরিষদ পান্তরে রাজনৈতিক দল সমূহের জন্য ‘সমন্বিত সভা’র রূপ পরিগ্রহ করবে।
জাতীয় পরিষদ
‘পরমত সহিষ্ণুতা’ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি হিসেবে নির্দিষ্ট হলেও গণতন্ত্র বা বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা স্থিতিশীলতা লাভ করে কেবল প্রাতিষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে। যেখানে এই প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকটি গড়ে ওঠে না সেখানেই গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে থাকে এবং যথারীতি পরমত সহিষ্ণুতা তথা রাজনৈতিক দলসমূহের পারস্পারিক বিশ্বাস-আস্থার দিকটা এগুতে পারে না। প্রস্তাবিত, নির্বাচন কমিশন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সমূহের পারস্পারিক এই যৌথ সভা বা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তথা জাতীয় পরিষদ- যা রাজনৈতিক দল সমূহের জন্য সমন্বিত সভা হিসেবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অনিবার্য শর্তকে পূরণ করে।
আমরা আইন না করে সার্চ কমিটি গঠন করি, নিজেদের পারস্পারিক বিশ্বাস-আস্থার ঘাটতি পূরণ করতে সংসদে বসে ঠান্ডা মাথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তত্ত্ব পাশ করি, এমনকি তার ফ্রাঙ্কেনস্টাইন রূপ দেখেও এখনও আমরা কেউ কেউ সহায়ক সরকারের দাবী করছি কিংবা সরকার হিসেবে সহায়তাও করতে চাচ্ছি অথচ ইতোমধ্যে তা অ-সাংবিধানিক হিসেবে প্রমাণিত। তথাপিও যে শর্তে সহায়তা করা যায় সে শর্তেই কেউ সহায়ক সরকারের দাবী তুলতেই পারে। মূখ্যত নির্বাচন কমিশন দুটো মন্ত্রণালয়ের হয়ে সরকারমুখীন থাকে। মুক্তিজোট গতবার নিবন্ধন সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে প্রথম মিডিয়া ব্রিফিং এ কমিশনের বারান্দায় দাড়িয়ে বলেছিল নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সমতাসহ নির্বাচনকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্র এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার আইন পাশ করতে হবে।
ইতোমধ্যে একটা নির্বাচন হয়ে গেছে, আরেকটি নির্বাচন আসন্ন, সহায়তা করার সদিচ্ছাটুকু নির্বাচন পর্যন্ত প্রতীায় কেন? বরং সে আইনটা পূর্বে করলেই তো এমন অ-সাংবিধানিক বিষয়টা উঠে আসার সুযোগ পেত না বা পায় না। আমরা রাজনীতি করি, সরকার গঠন করি কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকতাকে আমলে নিতে চাই না। অথচ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের মধ্যে স্থিতিশীল হতে পারে এবং তা প্রায় একমাত্র পথ হিসেবে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থার েেত্র স্বতঃসিদ্ধ হয়ে উঠছে সেটা আমরা যেনো ভাবতেই চাচ্ছি না।
জাতীয় পরিষদ-এর গঠন বা কাঠামোগত দিশা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের দলীয় প্রধানদের সমন্বয়ে গঠিত হবে জাতীয় পরিষদ। অর্থাৎ নিবন্ধন প্রাপ্তির পথ ধরে দলীয় প্রধানগণ পদাধিকার বলে জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক অথেনটিক মর্যাদায় নির্দিষ্ট হবেন। জাতীয় পরিষদের সদস্যগণ সংসদ সদস্যর সমমান বহন করবেন। জাতীয় পরিষদের সাধারণ কর্ম নির্বাহের জন্য আহ্বায়ক হিসেবে নির্দিষ্ট থাকবেন পদাধিকার বলে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আর উক্ত জাতীয় পরিষদের প্রধান তথা চূড়ান্ত নির্দেশদানকারী কর্তৃত্বে থাকবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
যুক্তিবিধান
প্রথমতঃ- সংসদ সদস্যের সমমান আর সংসদ সদস্য সমার্থক নয়। এেেত্র সংসদ সদস্যের সমমানে নিরাপত্তাসহ অপরাপর সুবিধা পেলেও সংসদ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ বা জনগণের জন্য আইন প্রণয়নের মতা প্রযুক্ত থাকবে না। অর্থাৎ রাষ্ট্র তথা প্রতিষ্ঠানগত শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা পেলেও জনগণের জন্য আইন করার বৈধতা বা সরকার গঠনে কেবল জনগণের রায়ে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে অর্জিত হবে। এটা কেউ কাউকে দিতে পারে না- কেবল জনগণই পারে।
কিন্তু সংসদে থাক বা না-থাক কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হওয়ার শর্তে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিধি বিধানের আওতার বাইরে থাকতে পারে না। সে অর্থেই জাতীয় পরিষদের প্রাতিষ্ঠানিক যুক্তিযুক্ততা গৃহীত হয় এবং জাতীয় পরিষদ গঠিত হলেও এেেত্র এই যুক্তিযুক্ততার কারণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান- এর অনুচেছদ ১২৪ এর কোনো ব্যত্যয় ঘটে না।
দ্বিতীয়তঃ রাজনৈতিক দল মাত্রই প্রত্য জনগণ সংশ্লিষ্ট তথা জণগণের মধ্যে তাকে ফিরতেই হয়। জনগণের প্রতি এই দায়বদ্ধতার বৈশিষ্ট্যের কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক এই স্বীকৃতিটা যুক্তিযুক্ততা পায়। কারণ যারা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেন তাঁরা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল বা দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।
অতএব, উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আমাদের সিদ্ধান্ত- নির্বাচন কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলসমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান তথা জাতীয় পরিষদ গঠন করে বিধি-বিধানগুলো পুনঃনির্দিষ্ট বা সংস্কার করতে হবে।