বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফের-মোশরেকদের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হলো জনমিতি পাল্টে দেওয়া। যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ও প্রভাবশালী সেখানে তাদের সংখ্যালঘু ও দুর্বল করাই হলো এই যুদ্ধের রণনীতি।
এটি জায়োনিস্টদের প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন করা হয় মূলত কোনো জমিনের আদিবাসী মুসলমানদের গণহত্যা ও নিপীড়ন চালিয়ে। সেখান থেকে মুসলমানরা উৎখাত হয়ে যাওয়ার পর ফাঁকা জায়গায় অন্য জায়গা থেকে অমুসলিমদের এনে বসতি স্থাপন করা হয়। এর মধ্যদিয়ে এমনভাবে জনমিতি পুনর্গঠন করা হয় যে ওই অঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও প্রভাব স্থায়ীভাবে মুছে যায়।
ক্রুসেডার ব্রিটিশদের সহায়তায় জায়োনিস্টরা ফিলিস্তিনে এই প্রকল্প করে সফল হয়েছে। সেখান থেকে গণহত্যা ও নিপীড়ন চালিয়ে মুসলমানদের উৎখাত করা হয়েছে৷ তারা শরণার্থী হয়ে জর্দান, লেবানন, সিরিয়া, মিশরসহ নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ফাঁকা জায়গায় সারা বিশ্ব থেকে ইহুদিদের এনে জড়ো করা হয়েছে। আজ মূল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে শুধু ইহুদি কর্তৃত্ব বিরাজ করছে। আমরা ফিলিস্তিন বলে যে দুটি ভূমি তথা গাজা ও পশ্চিম তীরের কথা শুনি তা মূলত দুটি শরণার্থী শিবির।
জনমিতিক এই যুদ্ধ ফিলিস্তিনে বাস্তবায়ন করেই জায়োনিস্টরা বসে থাকেনি। তারা ক্রুসেডার, হিন্দুত্ববাদী ও বৌদ্ধ মৌলবাদীদের দিয়ে বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনপদে ছড়িয়ে দিয়েছে।
বিগত ও এ শতাব্দীর সকল যুদ্ধ পর্যালোচনা করলে দেখবেন কিভাবে মুসলমানদের জনমিতিকে বদলে দেওয়া হচ্ছে। যার প্রতিটিতে রয়েছেে ইহুদিবাদী কানেকশন।
এই যে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে মিথ্যা ওয়ান অন টেরর করে দেশে মুসলমানকে গণহত্যা করা হচ্ছে, তাদের শরণার্থী করা হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে জনমিতি পাল্টে দেওয়া হচ্ছে।
এই ওয়ার অন টেররকে সামনে রেখেই মুসলিম দেশ আরাকানের জনমিতি স্থায়ীভাবে বদলে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে তাদের মাতৃভূমি ছাড়া করা হয়েছে। কখনো যদি তারা সেখানে ফিরতেও পারে তাতেও তারা সংখ্যালঘুই থাকবে।
খোঁজ নিলে জানবেন, রোহিঙ্গা মুসলিম বিরোধী জনমিতিক যুদ্ধ ঘটল যেই মিয়ানমার সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে, তিনি ইসরাইলি সেনাপ্রধানের কোর্সমেট ও বন্ধু, আর মিয়ানমার সেনারা গণহত্যার কাজে যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে তা ইসরাইলি।
কাশ্মীরে জনমিতিক যুদ্ধ:
মুসলিম দেশ কাশ্মীরকে ৭২ বছর ধরে দখল করে রাখছে ভারত। সেখানে পাঁচ লাখেরও বেশি ভারতীয় সেনা মোতায়েন আছে। তারপরেও কাশ্মীরের জনগণকে বশ্যতা মানাতে পারেনি ভারত। এর কারণ হলো জনমিতি। কাশ্মীরের মুসলমানরা সংখ্যাগুরু।
স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরি মুসলমানের এই জনমিতিক সুবিধা সংবিধানের বিশেষ ধারার কারণে বাতিলও করতে পারছিল না ভারত।
কারণ সংবিধান অনুযায়ী কাশ্মীরে বাইরের লোকেরা জমি কিনতে পারে না, ভোটার হতে পারে না। ফলে ভারত নানা জায়গা থেকে হিন্দুদের জড়ো করে মুসলমানদের জমি দখল করতে পারছিল না, জনমিতি পাল্টাতে পারছিল না।
কিন্তু আপনারা জানেন, গুজরাটের কসাই মোদি ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সঙ্গে জায়োনিস্ট ইসরাইলের গোপন আঁতাত প্রকাশ্যে চলে আসে।
মূলত জায়োনিস্টরা অর্থ ও বুদ্ধি দিয়ে আরএসএসসহ ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংস্থাগুলোকে বিপুল প্রভাবশালী করেছে।
ভারতীয় রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ ইসরাইল সমর্থিত হিন্দুত্ববাদীদের প্রভাব তৈরি হয়েছে। এরা সবাই মিলে হুট করে গুজরাট থেকে উড়িয়ে এনে নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী করেছে।
এরপর ভারতবর্ষজুড়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে জনমিতিক যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এই যে গরুর গোশত খাওয়ায় মুসলমান হত্যা, এটি মূলত ১৯৪৮ সালের আগে ফিলিস্তিনে জায়োনিস্ট গুণ্ডা বাহিনী ‘হাগানাহ’ এর নিপীড়নেরই নয়া সংস্করণ মাত্র।
এই নিপীড়ন চলার মাঝেই, ভারতীয় আদালতের মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী বিচারপতিদের দিয়ে মোদি সরকার আসামের মুসলিম জনমিতি বদলে দিতে নাগরিক পঞ্জি প্রণয়ন শুরু করে।
এবার ইভিএম মেশিন দিয়ে ভোট জালিয়াতি করে মোদি আবারও ক্ষমতাসীন হয়ে কাশ্মীরের জনমিতি বদল শুরু করেছে।
এর অংশ হিসেবে আজ মোদি সরকার দখলীকৃত কাশ্মীর সংক্রান্ত বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করেছে৷ এর ফলে কাশ্মীরের জমি জিরৎ লুটে নিতে পারবে হিন্দুত্ববাদীরা। একদিকে চলবে নিপীড়ন, আরেকদিকে লুটপাট। এভাবে এক সময় কাশ্মীরিরা ফিলিস্তিনি ও রোহিঙ্গাদের মতো জনমিতিকভাবে উধাি হয়ে যাবে।
কাশ্মীরের পরিস্থিতি কতটা কঠিন হবে তা বুঝতে সবাইকে খেয়াল করতে বলি, কাশ্মীরে মোতায়েনকৃত ভারতীয় সেনা কমান্ড ইসরাইলে প্রশিক্ষিত, যুদ্ধাস্ত্রগুলোও ইসরাইল থেকে কেনা।
সূত্র- নয়া দিগন্ত