রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ছাত্রলীগের সভাপতি যদি হেলিকপ্টারে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যায়, এটা কি মেনে নেওয়া যায়? তারই বা আয়ের উৎস কী? কেউ কি তাকে ব্যবহার করছে? আমাদের সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে সাইকেল মেরে প্রতিটি থানায় গিয়ে সভা করেছি। আমাদের দেখার জন্য সাধারণ জনগণ আসত। সে সময় ছাত্রনেতাদের তারা সম্মান করত। এখন ছাত্রনেতাদের জনগণ ভয় পায়। নেতারা এখন মূল দলের আজ্ঞাবহ।
কিশোরগঞ্জ সার্কিট হাউসে সোমবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সফিকুল গণি ঢালি লিমনের নেতৃত্বে সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ৩৫টি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, আমাদের সময়ে মূল দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা এক হয়ে কাজ করেছি। আর এখন ছাত্ররা মূল দলের পেটে ঢুকে পড়ে। সত্যিকার ছাত্র রাজনীতি করতে হলে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এদিকে, মঙ্গলবার জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে জজকোর্ট প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া এক সংবর্ধনা সভায় আইনজীবীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, আইনজীবীরা হলো সমাজের অগ্রসর চিন্তার পেশাজীবী মানুষ। এই পেশায় দীর্ঘদিন ছিলাম। তাই আমি মনে করি, আইনজীবীদের এই শক্তিকে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। শুধু নিজের অবস্থার উন্নতি করলে আইনজীবীদের শক্তির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা থাকবে না।
রাষ্ট্রপতি তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুনলাম আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা হলে কোনো আইনজীবী সেই মামলায় তার বিপক্ষে কোর্টে দাঁড়ান না। আইনজীবীরা কি অপরাধ করতে পারেন না? আমি মনে করি, আইনজীবীদের এই সিদ্ধান্তটি সুশাসনের অন্তরায় এবং ক্ষমতার অপপ্রয়োগ। এমন সিদ্ধান্ত থেকে বের হয়ে আসার জন্য তিনি জেলা আইনজীবীদের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, আমি আইন মানবো না, অথচ আইন পেশা করব, এটা কেমন করে হয়। দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। কিন্তু বারে আমরা আইনজীবীরা এক ও অভিন্ন ছিলাম। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে বারের উন্নতি করেছি। পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধির কাজ করেছি। সেই ধারাবাহিকতা যেন সবসময় বজায় থাকে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, কিশোরগঞ্জে আইনজীবীদের সুনাম দীর্ঘদিনের। তারা পেশাগত উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের কাজকে আরও বেগবান করবেন। পরে তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ রশিদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহবুব-উল ইসলাম, সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সহিদুল ইসলাম সহীদ প্রমুখ।
সংবর্ধনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সারওয়ার হোসেন, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ূয়া, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন, জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজল, অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক, ভুপেন্দ্র ভৌমিক দোলনসহ সরকারি-বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সূত্র: সমকাল
শে.টা.বা.জ