প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ ভাইরাস যেন এক বড় অভিশাপ। যাদের দিন এনে দিন খেতে হয় তাদের পক্ষে করোনাভাইরাসের ভয়ে ঘরে বসে থাকার কোনো উপায় নেই। নাটোরের গুরুদাসপুরের তেমনই এক চা দোকানিকে সাহায্য করতে গিয়ে তার কষ্ট দেখে মর্মাহত হলেন পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশপাশি ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে নাটোরের গুরুদাসপুর থানা পুলিশ। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এলাকার মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে থানার গেটে বেসিনে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশি টহল, জীবাণুনাশক স্প্রে, মাইকিং ও সাহায্য প্রদান করছে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ।
চলাচলে বিধি-নিষেধ স্বত্ত্বেও পেটের দায়ে শহরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়া গ্রামের এক চা দোকানি চা বিক্রি করছিলেন। হঠাৎ থানা পুলিশ সাহায্য নিয়ে তাদের সামনে উপস্থিত হয়। এ সময় গুরুদাসপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদুল ইসলাম চা দোকানির অবস্থা দেখে মর্মাহত হয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। সম্প্রতি তার এই স্ট্যাটাসে এলাকার বিভিন্ন মানুষ ও সংগঠন সাহায্য নিয়ে দরিদ্র্য মানুষের বাড়িতে যাচ্ছেন।
এসআই মো. শহীদুল ইসলাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘পুলিশের চাকুরি করার সুবাদে অসহায় মানুষের কষ্টগুলো দেখার সুযোগ হয়। আজ অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে চাঁচকৈড় পুরান পাড়া গ্রামে একটা চা দোকানদারকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাহায্য দিতে গিয়ে যা দেখলাম, তা বলার ভাষা নেই। দোকানে গিয়ে দেখলাম- দোকানদার চা বিক্রি করছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম নিষেধ করার পরও কেন চা বিক্রি করছেন? সে বলল, ‘‘স্যার আমার এক বছরের বাচ্চা আছে, তাকে কী খাওয়াবো? বাসায় কোনো টাকা নাই। খাবো কী?’’ কথাটা শোনার পর অনেক কষ্ট পেলাম। তার সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চাটিও সামনে আসলো। থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সাহায্য দিলাম। সাহায্য পাবার পর চা দোকানদারের চোখে পানি। আবারও মর্মাহত হলাম।’
তিনি আরও লিখেন, ‘নিজের পকেটে খুব বেশি টাকা ছিল না। যা ছিল তা দিলাম। বাধ্য হয়ে এক বিত্তবানকে বললাম সাহায্য করতে। সেও তাকে কিছু টাকা সাহায্য করলো। চা দোকানদার আর তার স্ত্রীর হাসি মুখটা দেখলাম। ভালো লাগলো খুব। দোকানদার কথা দিলো যতদিন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চলবে ততদিন সে চা বিক্রি করবে না।’
সম্পাদনা:-এম. সুরুজ্জামান, বার্তা সম্পাদক- শেরপুর টাইমস ডটকম।