রফিক মজিদ : আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় শেরপুর জেলার একমাত্র নাকুগাঁও স্থলবন্দরটি দীর্ঘদিন যাবৎ স্থবির পড়ে আছে। এ বন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। তবে সিমেন্ট ও পারটেক্স বোর্ড অল্প পরিমাণ রফতানি হয়েছে। আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় বেকার হয়েছেন বন্দরের কয়েক হাজার শ্রমিক-ব্যবসায়ী। সংকট কাটিয়ে উঠতে ভুটানের সঙ্গে পণ্য পরিবহন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রায় ৩৩ বছর পর ১৯৯৮ সালে পুনরায় তৎকালীন সরকার এটি নাকুগাঁও শুল্ক ও স্থলবন্দর হিসেব চালু করেন। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের নাকুগাঁও সীমান্তে (ভারতীয় অংশের ঢালু) প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান আমল থেকে চালু থাকলেও পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্দরটি অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রায় ৩৩ বছর পর ১৯৯৭ সালে পুনরায় নাকুগাঁও শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু করা হয়। এরপর ২০১০ সালে ওই শুল্ক স্টেশনটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের পর ২০১৫ সালের ১৮ জুন আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করে নাকুগাঁও স্থলবন্দর।
শুল্ক, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিস সূত্র জানায়, গত ছয় বছরের মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পাঁচ কোটি ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই কোটি ৫৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুই কোটি ২৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা রাজস্ব^ আয় হয়েছে। সে হিসেবে এ স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আদায় ক্রমেই কমছে। চলতি আর্থিক বছরের ছয় মাসে এ বন্দর দিয়ে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।
সূত্র জানায়, প্রথম দিকে ভারত থেকে ১৯ ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি হলেও কয়েক বছর ধরে শুধু পাথর ও কয়লা আমদানি হচ্ছে। তবে দুবছর আগে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে স্থানীয় পরিবেশবাদীদের করা মামলার কারণে পাথর-কয়লা আমদানিও বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের শুরু থেকে আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। সে সঙ্গে কমছে রাজস্ব আয়ও। যা ছয় বছরের মধ্যে চলতি অর্থবছর রাজস্ব আয় নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। অর্থাৎ এ বন্দর দিয়ে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মধ্যে কোনো আমদানি-রফতানি না হওয়ায় ছয় মাসে কোনো রাজস্বও আদায় হয়নি। বন্দরে কাজ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। সে সঙ্গে কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অলস সময় পার করছেন। তবে বন্দরটি সচল করতে ভুটানের সঙ্গে পণ্য পরিবহনে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস দফতর।
এদিকে কয়লা-পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে ভারত থেকে ফুলঝাড়–, সুপারি, ডাব, হলুদ, কাজুবাদাম, তেতুল, স্ক্র্যাপ (পুরোনো লোহা), কসমেটিকস, থ্রিপিস কাপড়, সেন্ডেল ও বিভিন্ন ইলেট্রনিক পণ্য আমদানির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছে নাকুগাঁও আমদানি-রফতানিকারক সমিতি। ওই সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যেহেতু পাথর-কয়লা দিতে পারছে না, সেহেতু আমাদের সরকারের কাছে এ বন্দর দিয়ে বৈধ সব পণ্য আমদানির সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান এ বন্দর পরিদর্শন করেছেন। স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় শতাধিক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
শেরপুর জেলা কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অফিসের সহকারী কমিশনার মো. আবদুল হান্নান বলেন, ‘নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে কয়লা ও পাথর আমদানির পাশাপাশি অন্য নতুন পণ্য আমদানি করতে রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভারতে পাথর-কয়লার বিষয়ে করা মামলার সমাধান ও নতুন পণ্য আমদানির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।