ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। তবে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত ততটা প্রলয়ঙ্করী রূপ নেয়নি বুলবুল, এটি স্বস্তিদায়ক। ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল।
তাছাড়া সুন্দরবনের কারণেও ঝড়টি খুব বেশি তাণ্ডবলীলা চালাতে পারেনি। জানা গেছে, প্রথমে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের সাগরদ্বীপে বুলবুল আঘাত হানে। এরপর এটি সুন্দরবনের বাংলাদেশের খুলনা অংশে ঢুকে পড়ে।
গাছপালায় বাধা পেয়ে ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা কমে আসে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলা একইভাবে সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য তারপরও ওই দুটি ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বিপুল।
যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আগাম ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। বুলবুলের ক্ষেত্রে আগাম ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কারণে আমরা দেখেছি, উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল।
সরকারের প্রচারণা ও আগাম সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপে মানুষ যে সতর্ক হয়ে উঠছে, এটি তারই প্রমাণ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রেই আগাম ও পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ বা বন্ধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে পূর্ব প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এবং সাম্প্রতিককালের আরও কিছু ঘূর্ণিঝড়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়া থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। একটা সময় ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানেই ছিল ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি। কিন্তু সময় বদলেছে।
এখন নিজেদের সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ ব্যবহারের ফলে দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ রোল মডেলের স্থানও পাচ্ছে অনেক দেশের কাছে। তবে এ ব্যাপারে আত্মতৃপ্তি নয়, নিজেদের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।
প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেন প্রাণ ও সম্পদহানি আরও কমিয়ে আনা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে।
বুলবুলের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি যে একেবারেই হয়নি তা নয়। ১১ জেলায় ঘর ও গাছচাপা পড়ে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর রয়েছে। কয়েক হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে বহু গবাদিপশু। কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে তলিয়ে গেছে আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জমি।
এখন প্রয়োজন বানের পানিতে ফসল ডুবে গিয়ে এবং অন্যান্য কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো। যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যেসব এলাকা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে, সেসব এলাকার বাঁধ দ্রুত পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।
বুলবুলের আঘাত মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার এবং সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ আগেই দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ছুটি বাতিল, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা পেছানোসহ ত্রাণ ও দুর্যোগসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য। এর ফলও পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।