ভারত সীমান্তঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে মরু অঞ্চলের ফল ‘সাম্মাম’ চাষে লাভ পাওয়ার আশা করছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন। সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের এই ফল দেশের বিভিন্ন স্থানে আগে থেকেই আবাদ হলেও গারো পাহাড়ে এই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এলাকায় নতুন জাতের এই ফলের চাষ হওয়ায় আনোয়ারের ‘সাম্মাম’ ফলের এ বাগান দেখতে আসছেন আশপাশের এলাকার কৃষকেরা। তার কাছ থেকে ‘সাম্মাম’ চাষের পরামর্শও নিচ্ছেন অনেক কৃষক।
এক জাতের সাম্মামের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরে লাল। আরেক জাতের সাম্মামের বাইরের অংশ হলুদ আর ভেতরে লাল। তবে দুটি ফলই খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। ‘সাম্মাম’ ফল বাগানে দেখা গেছে, গারো পাহাড়ের গোমড়া এলাকায় একটির সবজি বাগানের পাশে কুমড়া গাছের মতো লতানো গাছ। আর তাতে ঝুলছে জাম্বুরা আকৃতির মত গোল গোল ফল। প্রায় প্রতিটি গাছেই ভরপুর ফুল ও ফল। বাঁশের বাতা আর নেট ব্যাগ বা জালের ফাঁকে ফাঁকে বাগান যেন ফলে ভরে গেছে। কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার ‘সাম্মাাম’ বাগানের গাছের পরিচর্যা করছেন। আশপাশের কৃষকেরাও বাগান দেখতে ভিড় করছেন।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। সেখানে ভালো না লাগায় কয়েক বছর আগে বাড়িতে এসে বাবার সঙ্গে সবজি শুরু করেন আনোয়ার। তিনি বলেন, সবজির পাশাপাশি নতুন কিছু একটা চাষ করার জন্য খুঁজছিলাম। ইউটিউব ঘেঁটে ‘সাম্মাম’ সম্পর্কে জানতে পারি। পরে স্থানীয় বীজ বিক্রেতার মাধ্যমে সাম্মাম ফলের বীজ সংগ্রহ করি। এ বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে ১০ শতাংশ জমিতে ওই বীজ রোপণ করি। মাত্র এক মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। পরে পরাগায়ণের দেড় মাসের মধ্যে ফুল থেকে ফল ধরে। গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ফল পাকতে শুরু করে। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ ফল খাওয়া ও বাজারে বিক্রি করার উপযোগি হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ। এ ফল চাষে এ পর্যন্ত খরচ করেছি মাত্র ২৫ হাজার টাকা। বাগানে যে পরিমাণে ফল আসছে, তাতে আশা করছি লাখ টাকার বেশি এ ফল বিক্রি করতে পারব।
আনোয়ারের বাবা মোজাম্মেল বলেন, বাদামী ও সবুজ জাতের ‘সাম্মাম’ ফল পাওয়া যায়। আমরা সবুজ জাতের ‘সাম্মাম’ চাষ করেছি। আমার ছেলে এ ফল চাষের কথা জানালে এটি এ এলাকার ফল না বলে চাষাবাদে প্রথমে না করি। এর পরেও আনোয়ার চাষ করে। এরপর দুই মাস পরেই দেখি গাছে অনেক ফুল ও ফল ধরে। আগামীতে আরো বেশি জমিতে এ ফল চাষ করবেন তারা।
স্থানীয় কৃষক হাসমত আলী বলেন, শুনতেছি এটি একটি দামী ফল। ফলটি খুব মিষ্টি ও রসালো। খেতেও সুস্বাদু এবং খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ। আনোয়ার পরীক্ষামূরকভাবে এ ফল চাষ করেছে। অনেক ফল ধরছে। আগামীতে এ ফলের চাষ আমিও শুরু করব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, আনোয়ার একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ‘সাম্মাম’ চাষ করে সফল হয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তার বাগান নিরাপদ রাখতে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আনোয়ারের এ ফল চাষ দেখে আশপাশের অনেকেই সাম্মাম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, এই ফলের চাষ করে লোকসানের আশঙ্কা নেই। সাম্মাম চাষে কেউ আগ্রহী হলে কৃষি অধিদফতর থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।