শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পর্যটন মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত সীমান্ত ঘেঁষা গারো পাহাড়খ্যাত ‘গজনী অবকাশ কেন্দ্র’ পর্যটন কেন্দ্রের প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্য উপভোগে উৎসুক মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ পর্যটন কেন্দ্রে উচ্ছাস আর আনন্দে মেতে উঠছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসুরা। পর্যটকদের আগমনে দারুণ খুশি এখানকার বাহারী জিনিসপত্রের ব্যবসায়ীরা।
এই পর্যটন কেন্দ্রের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব সহজেই আকৃষ্ট করে আগত পর্যটকদের। প্রকৃতি এখানে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড় টিলা আর সমতল ভূমিতে সবুজের সমারোহ। শাল, গজারী, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতি প্রেমিদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যায়। অপরূপ চাদরে মোড়ানো পাহাড় আর সেই পাহাড়ের পাশ ঘেঁষেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য।
এদিকে, শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নতুন করে পাহাড়ের বুক জুড়ে তৈরী হেেয়ছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পড়ন্ত বিকেলে ছোট ছোট নৌকায় করে ঘুরার জন্য রয়েছে লেক। লেকের বুকে নৌকায় চড়ে পাহাড়ের পাদদেশে কফি আড্ডা আর গান এখানে আগত দর্শণার্থীদের জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা তৈরী করবে। গারো মা ভিলেজেও ছোঁয়া লেগেছে নতুনত্বের। মাশরুম ছাতার নীচে বসে বা পাখি ব্রেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধান ক্ষেত আর পাহাড়ী জনপদের ভিন্ন জীবনমান উপভোগ করা যাবে খুব সহজেই। আগত শিশু দর্শণার্থীদের জন্য চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কের পাশাপাশি এবার নতুন যুক্ত হচ্ছে শিশু কর্ণার। এসব দৃশ্যাবলি দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
গজনী অবকাশের বিভিন্ন জায়গায় কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা নিজ ও প্রিয়জনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন নিজের মোবাইল ফোনে। চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক ছিল সকাল থেকেই মুখরিত। শিশুদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় পার্কের ফটকে লম্বা লাইন দেখা যায়। এসময় শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এ শিশুপার্কটি। বিভিন্ন রাইডে চড়ে ও খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। শিশুদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককেও আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায়।
মোর্শেদ আহমেদ পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরির কারণে সবসময় ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এই শীতে একটু সময় পাওয়ায় স্ত্রী স্বর্ণা ও দুই বছরের মেয়ে সিনিগ্ধাকে নিয়ে অপরূপ রূপের চাদর মোড়ানো পাহাড় দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, গারো পাহাড় ও পর্যটন কেন্দ্রে তৈরী কৃত্রিম দৃশ্যগুলো তাদের মনে অনেক আনন্দ দিয়েছে।
শুধু মোর্শেদ আহমেদ কিংবা সিনিগ্ধা নয়, গজনী অবকাশে এখন সব বয়সের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিকনিক থাকায় প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে এখানে।
অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশদারের ইজারাদার হান্নান সরকার বলেন, শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ছোট-বড় প্রায় চার শতাধিক গাড়ি দিয়ে হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটেছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটছে।’
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে গজনী অবকাশে দর্শনার্থী বেড়েছে। এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকায় নিরাপত্তার কোন সমস্যা নেই। এছাড়া আগত দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারে তার জন্য পোশাক ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।’