বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আগামী ৮ ফেব্রয়ারিতে কি রায় হবে সেটা সরকার পরিষ্কার করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ৮ ফেব্রুয়ারিতে কি রায় হবে সেটা বিচার বিভাগের যিনি বিচারক আছেন তিনি বলার আগে দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে তার মন্ত্রী সভার লোকজন এবং নির্বাহী বিভাগে যারা বিভিন্ন সংস্থায় জড়িত তাদের মন্তব্যের মাধ্যমে তারা পরিষ্কার করে দিয়েছে। সুতরাং বিচারকের আর কিছু বলা বাকি নেই। বিচারকের এখন আর কোন কাজ নেই। তার কাজটা রাষ্ট্রপ্রধান, তার মন্ত্রী পরিষদ নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন করে দিয়েছে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ আয়োজিত ‘জীবনের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
আমির খসরু বলেন, ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে বিচারের রায়ের জন্য নয়। অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ থেকে বিবেক বিতাড়িত হয়ে গেছে কিনা তা শোনার জন্য। রায়ের জন্য নয় মানুষ অপেক্ষা করছে বিচার বিভাগের বিবেক আছে কি নেই সেটা বোঝার জন্য। যদি প্রমাণিত হয় বিচার বিভাগের বিবেক প্রতারিত হয়েছে, তাহলে আর কোন কিছুর উপর বাংলাদেশের মানুষের আস্থা রাখার কোন সুযোগ থাকবে না। এরপর যা হওয়ার তা এদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিবে।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, যারা আজকে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা যে বুঝতে পারছে না, এটা চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ তারা সব কিছু বুঝে শুনেই কাজ করছে। কারণ তারা আজকে যেভাবে ক্ষমতায় আছে এগুলো করেই তাদেরকে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, জুলুম-নিপীড়ন, হত্যা, গুম,পঙ্গু- এগুলো করতে করতে এগুলোর তো একটা শেষ করতে হবে। কারণ যারা ক্ষমতায় আছে তাদের ক্ষমতার উৎস ভয়ভীতি, গুম, খুন, হত্যা। সেই কারণে বর্তমানে প্রেক্ষাপটে ৮ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি অঙ্গকে সম্পূর্ণভাবে কুক্ষিগত করেছে। রাষ্ট্রের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকেও সম্পূর্ণভাবে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে। যার ফলশ্রুতিতে ৮ ফেব্রুয়ারি আজকে দেশের মানুষের সামনে বড় দিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ৮ ফেব্রুয়ারি কি রায় হবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটা বুঝানোর কিছু নেই। কোন রায় বিচারের আগে একটি দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি কোন দিন আমরা দেখিনি। ছোট বড় রায় যাই হোক না কেন মানুষ কিন্তু তার অপেক্ষায় থাকে। যারা সুবিচার চায় সুবিচারের অপেক্ষায় থাকে এবং বিচার বিভাগ তার বিবেকের পরিচয় দেয় একটি আইনগত রায়ের পক্ষে। যেটা কার কাজ। কিন্তু রায় কি হবে দেশের মানুষ আজকে শাসকদলের আচরণে পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে।
তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে সরকার এতই ভীত যে, এটা তাদের কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হচ্ছে। তারা এখন বিভিন্ন জেলায় জেলায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা করছে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার হুংকার দিচ্ছেন। কারণ তাদের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। একটা রায় হবে তাতে সরকারের লোকজনের নতুন করে সভা সমাবেশ করার প্রয়োজন কি? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুংকার দেয়ার প্রয়োজন কি? তাদের এ আচরণে জাতির বিবেক জাগ্রত হয়ে গেছে আর তাদের বিবেক ধ্বংস হয়ে গেছে।
আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ সত্য না মিথ্যা এটার প্রমাণ হবে। শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেছিলেন বলে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। বিচারকের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। শেখ মুজিব ২৪ বছর আন্দোলন করেছিলেন। আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সে কথা তো ভুলেই গেছেন।
তিনি বলেন, বেগম জিয়ার একটাই শুধু দোষ, তিনি কেন গণমানুষের পক্ষে আছেন, গণতন্ত্রের পক্ষে আছেন, স্বাধীনতা সার্ভভৌমত্বের পক্ষে কাজ করছেন। এটি শুধু তার দোষ।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কেএম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে এবং সহ-সভাপতি নাজমুল হোসেন রনির সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, জিনাফের সভাপতি মিয়া মো: আনোয়ার, ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রমুখ।