সোচিতে রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে তখন চলছে টাইব্রেকারের রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত। ভিআইপি গ্যালারিতে উত্তেজনায় ফুটছেন একজন ক্রোয়াট–সমর্থক। লাল রঙের প্যান্ট আর ক্রোয়েশিয়ার লাল-সাদা জার্সি পরা সেই নারীই যেন মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছিলেন বারবার। টাইব্রেকারের শেষ শটটা জালে জড়িয়ে দিয়ে ইভান রাকিতিচ যেই না হাওয়ায় দুহাত মেলে দিলেন, গ্যালারিতে থাকা সেই নারীও নেচে উঠলেন উল্লাসে। যেন কোনো ষোড়শী বা তরুণী! অথবা দলের দ্বাদশ খেলোয়াড়! এই ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে গেছে অন্তর্জালে। উদ্যাপনে উন্মাতাল এই নারী আর কেউ নন, খোদ ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ!
২০১৫ সালে ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া কিতারোভিচ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল দেখেছেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ও রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে। কিন্তু প্রেসিডেন্টসুলভ গাম্ভীর্য নিয়ে চুপচাপ বসে থাকেননি। কখনো ক্রোয়েশিয়ার জন্য গলা ফাটিয়েছেন আবার কখনোবা প্রাণখোলা হাসিতে গোল উদ্যাপন করেছেন। ম্যাচের আগেই রুশ প্রধানমন্ত্রী মেদভেদেভকে এটাও বলে রেখেছিলেন, ‘দেখো, ম্যাচটা ক্রোয়েশিয়াই জিতবে!’
ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়েরা প্রেসিডেন্টের বিশ্বাসকে সত্যি করেছেন। সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে যোগ দিতে ম্যাচ শেষে কিতারোভিচ সোজা চলে গেছেন ড্রেসিংরুমে। নেচে-গেয়ে উল্লাস করেছেন খেলোয়াড় আর কোচিং স্টাফদের সঙ্গে। জানা গেছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও তিনি থাকছেন মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে।
তবে নিছকই ফুটবল আনন্দে ভেসে যেতে নয়, কিতারোভিচের এই রাশিয়া ভ্রমণের উদ্দেশ্য দুই দেশের মধ্যকার কূটনীতিকে এগিয়ে নেওয়া। রুশ সংবাদ সংস্থা তাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেটি বলেছেনও, ‘ফুটবল কূটনীতি আমাদের দুই দেশকে কাছাকাছি আনার জন্য খুবই কাজের জিনিস। খেলাধুলা আমাদের সবাইকে একত্র করে।’
তবে পরশু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মাঠে না থাকায় দ্বিপক্ষীয় অনেক আলোচনাই হয়তো বাদ রয়ে গেছে। কিতারোভিচ বলেছেন, ‘আশা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে দেখা হবে। হয়নি। খুব শিগগির নিশ্চয়ই হবে।’
সেই দেখাটা ১৫ জুলাই লুঝনিকি স্টেডিয়ামে হলে কিন্তু দ্বিগুণ লাভ কিতারোভিচের! সেটি যে হবে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল।
সূত্র: প্রথম আলো।