বাংলা ট্রিবিউন : গ্রামের নাম খট্টেশ্বর, তবে গ্রামটি এখন ‘কুমড়া বড়ি’র গ্রামই বলেই পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে রোদে শুকানো হচ্ছে সারি সারি সাদা রঙের মাসকালাইয়ের তৈরি কুমড়া বড়ি। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠানে বাঁশের চাটাইয়ের ওপর সকাল থেকেই চলে এই বড়ির তৈরির কাজ। বাড়ির গৃহিণী থেকে শুরু করে ছোট-বড় সবাই মিলে তৈরি করে চলেন সুস্বাদু এই কুমড়া বড়ি। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের খট্টেশ্বর তাই এখন ‘কুমড়া বড়ি’র গ্রাম!
জানা যায়, এই গ্রামে প্রায় একশ বছর আগে থেকেই বিখ্যাত এই বড়ি তৈরি করা হয়। শত বাধা উপেক্ষা করে এখানকার কারিগররা এখনও ধরে রেখেছেন এই পেশা। সারা বছর টুকটাক তৈরি হলেও শীত মৌসুমে এই বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। শীতকালের এই আর্কষণীয় পণ্য এখন নওগাঁ জেলার বাইরেও চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বড়ি তৈরির কারিগর শান্তি রাণী জানান, মাসকালাই পানিতে ভিজিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে মেশিনে ভেঙে গুঁড়া করে আবার তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রুটি তৈরির আটার মতো করা হয়। তারপর এর সঙ্গে চালকুমড়া ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বড়ি বানানের পর তা ২-৩ দিন রোদে শুকানোর পর তা বিক্রয় করা হয়।
বগুড়া জেলা থেকে বড়ি কিনতে এসেছেন বড়ি ব্যবসায়ী এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘এখানের কুমড়া বড়ি যেমন নরম হয় তেমনি খেতেও ভাল লাগে। একবার যে এই বড়ি খায় পরের বার আবার খুঁজে নিয়ে এই বড়ি কিনে নিয়ে যায়। আমার কিছু নিজস্ব গ্রাহক আছেন যাদের প্রধান পছন্দ এখানকার বড়ি। অন্য বড়ি কম দামে পাওয়া গেলেও নিতে চায় না গ্রাহকরা। তাই বাধ্য হয়ে তাদের জন্য এখান থেকেই বড়ি নিয়ে যাই।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রূপকুমার জানান, সারা দেশে এখানকার কুমড়া বড়ির সুনাম রয়েছে। অনেক দূর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এই গ্রামের কুমড়া বড়ি নিয়ে যান। তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সরকারিভাবে কিংবা কোনও সংস্থার কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পায় না। যদি আর্থিক ভাবে সহযোগিতা পাওয়া যেত তাহলে এই শিল্পটি আরও প্রসারিত হতো।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, ‘খট্টেশ্বর গ্রামে অনেক বছর ধরেই বাণিজ্যিকভাবে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই সুস্বাদু মাসকলাইয়ের কুমড়া বড়ি তৈরি করছে। এখানকার কারিগররা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে আমরা তাদের সরকারি ভাবে না হোক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।’