শেরপুরে লঘু অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় বিনা বিচারে দীর্ঘ ৬ মাসেরও অধিক সময় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক থাকার পর শুকুর আলী রিপন (১৬) নামে এক কিশোরকে জামিনে মুক্ত করলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মানবাধিকার আইনজীবী রফিকুল ইসলাম আধার। রবিবার দুপুরে ওই আইনজীবীর স্ব-প্রণোদিত জামিন আবেদনের শুনানী শেষে শিশু আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন কিশোর রিপনের জামিন মঞ্জুর করেন। কিশোর রিপন শ্রীবরদী উপজেলা সদরের মুন্সীপাড়া মহল্লার হতদরিদ্র মকছেদ মিয়ার ছেলে। এরপর জামিননামা দাখিলের পরপরই আদালত থেকেই তাকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।
জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারি বিকেলে শ্রীবরদী সদরের মধ্যবাজার এলাকা থেকে স্থানীয় মাদকসেবী যমুনা হরিজনের পুত্র রঞ্জু হরিজন টেরিয়ার (৪০) সাথে গ্রেফতার করা হয় কিশোর শুকুর আলী রিপনকে। এরপর টেরিয়ার হেফাজত থেকে ১শ গ্রাম ও রিপনের হেফাজত থেকে ৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধারের অভিযোগে শ্রীবরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এসআই আকতারুজ্জামান। পরদিন ওই দুজনকেই আদালতে সোপর্দ করা হলে টেরিয়াকে জেলা কারাগারে ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কারণে রিপনকে গাজীপুরের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ২৬ ফেব্রুয়ারি রঞ্জু জামিনে মুক্তি পেলেও পৃথক অভিযোগপত্র দাখিলের কারণে রিপনের মামলাটি বদলি হয়ে শিশু আদালতে যায়। কিন্তু এরপরও আত্মীয়-স্বজনের তদবিরের অভাবে কিশোর রিপনের পক্ষে কোন জামিনের আবেদন করা হচ্ছিল না। সাড়া মেলেনি লিগ্যাল এইড বা অন্য কোন মানবাধিকার সংগঠনের। ওই অবস্থায় দীর্ঘ ৬ মাস ৭ দিনের মাথায় রবিবার কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে দু’জন কনস্টেবলের সহায়তায় নিয়ে আসা রিপনকে শিশু আদালতে দেখতে পেয়ে তার প্রতি নজর পড়ে মানবাধিকার আইনজীবী রফিকুল ইসলাম আধারের। এরপরই আদালতের অনুমতি নিয়ে জামিনের আবেদন দাখিল করেন তিনি।
জামিনে মুক্তির পর কিশোর রিপন দাবি করেন, ঘটনার সময় অপর আসামী টেরিয়ার সাথে তাকে গ্রেফতার করলেও তার হেফাজত থেকে কোন আলামত পায়নি পুলিশ। সে আরও জানায়, হতদরিদ্র মা-বাবা প্রায় ৬ বছর যাবত রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করায় বাড়িতে এক ছোটবোনকে নিয়ে বৃদ্ধ দাদা-দাদীর সাথে থাকত। সে কষ্টের জীবনে মাঝে-মধ্যে চাচাদের সাথে দিনমজুরের কাজও করত। সে তার বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় নিজেকে নির্দোষ এবং তার দায় থেকে দ্রুত মুক্তি দাবি করেন।