নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সোমেশ্বরী নদী পাড়ের ভবানীপুর গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র কাঠের সেতু ভেঙে পড়েছে। ফলে যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে ওই গ্রামের মানুষ।
মঙ্গলবার সকালে সেতুটি পাহাড়ি পানির স্রোতের তোড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে উপজেলা সদরের সঙ্গে ওই এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের এই ভবানীপুর গ্রামে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে গারো, হাজংসহ বেশ কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরেই তাদের যাতায়াতের পথ একটি মাত্র কাঠের সেতু। পূর্বে সেখানকার মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণ হয়েছিল তবে সেটি কিছুদিন পরই নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের পাহাড়ি ছরার উপর কাঠ-বাঁশ দিয়ে তৈরি সেতুর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
বর্তমানে সেই শেষ অবলম্বন কাঠের সেতুটিও ধসে পড়ে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রহমত মিয়া জানান, যাতায়াতের একমাত্র কাঠের সেতুটি ভেঙে পড়েছে। যার কারণে শহরসহ গ্রামীণ হাটবাজারের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
চিত্রা সাংমা জানান, শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় আমরা খুবই বিপাকে পড়েছি।
যতদিন না এখানে সেতু নির্মাণ হবে ততদিন আমরা শহরে যেতে পারব না। তাই আমাদের যাতায়াতের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় কৃষক হাশেম মিয়া জানান, চলাচলের একমাত্র সেতুটি ভেঙে পড়ায় কৃষি ও গবাদি পশু নিয়ে কৃষকদেরও বিপাকে পড়তে হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, কাঠের সেতুটি ভেঙে পড়ায় ওই পাড়ের মানুষ খুবই দুর্ভোগে পড়েছে। ইউএনও স্যার পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. খোয়াজুর রহমান জানান, বর্ডারের আইন রয়েছে যে সীমান্তের ১৫০ গজের ভিতরে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা যায় না। তবে জিরো পয়েন্টের বটতলা স্থানের পূর্বের ভেঙে যাওয়া সেতুর নদীর পাড় বাঁধাইয়ের কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর জিরো পয়েন্টের ১৫০ গজ দূরত্বে রাস্তা হয়ে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, ‘সেতুটি বিকেলে পরিদর্শন করেছি। সেতুটি পাহাড়ি ছরার পানির স্রোতে ভেঙে ওই গ্রামের মানুষ শহর মুখীর পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ছরার পানির প্রচুর স্রোতের জন্য প্রাথমিকভাবে একটি নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘পানির স্রোত কমলেই সেতুটি মেরামত করা হবে। এছাড়াও সেখানে একটি স্থায়ী সেতুটি নির্মাণের জন্য এলজিইডির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’