মেশিনডা করার পরে কয়েক দিন এক-দেড় ঘন্টা করে চালানো হয়েছে। চালানোর পর থেকে পরিষ্কার পানি আসে না, ঘোলা পানির সঙ্গে কাদা মাটি আসে। কাদা মাটির আসার পর থেকে যে বন্ধ হইল, বন্ধই রয়েছে। পরে নালিতাবাড়ী বিএডিসি’র যে অফিসার আছে, তারে জানাইছি। তারা আইসে দেইখ্যা বলছে, ব্যবস্থা নিতাছে। আইজও পর্যন্ত এডার পানি ব্যবহার করতে পারি নাই। এ প্রতিবেদককে কথা গুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও গ্রামে নির্মিত পাতকুয়ার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. ওমর আলী।
শুধু পোড়াগাঁও গ্রামে নয়, জেলার নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাবিটা টাকা দিয়ে কৃষকের সেচের জন্য করে নির্মিত সৌরচালিত ২৩টি পাতকুয়া (ডাগওয়েল) রক্ষনা-বেক্ষণ না থাকায় কাজে আসছে না। ফলে গচ্ছা যাচ্ছে এসব পাতকুয়া নির্মানের টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকা নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত তিন বছরে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের প্রায় ২কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান করেন ২৩টি ড্রাগওয়াল বা পাতকোয়া। উদ্দেশ্য ছিলো, বিনা টাকায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের সবজী ও ইরি ধান চাষে সেচ দেয়া। সৌর বিদ্যুত চালিত এ পাতকুয়াগুলো (ডাগওয়েল) নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প। আর কৃষি বিভাগ সেচ কাজের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে আসছিলো। কিন্তু এসব পাতকুয়া শুরুতে কিছু পানি ওঠলেও বছর যেতে না যেতেই পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিটি পাতকুয়ার পানি সুবিধা পাওয়ার জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কৃষক গ্রæপ করে দেয়া হয়। মাসিক স্বল্প টাকা জমা করে পরবর্তীতে পাতকুয়ার সমস্যা দেখা দিলে সারিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু পাতকুয়ার পানি ৪০জন তো দূরে থাক দুই জন কৃষকের চাহিদাও মেটানো যাচ্ছে না। টাকা দিয়ে সেচের পানি দিয়ে ফসল করতে হচ্ছে তাদের।
নালিতাবাড়ীর মানিক কুড়া গ্রামের কৃষক হযরত আলী জানান, পাতকুয়া দিয়ে আমাগো দুই শরিকেরই পানি অয়না। অন্যগোরে পানি দিমু কেমনে। এডাতো নষ্ট অইতাছে। পানি বাইর অয়না। কেউ আহেও না। পানিই দিবার পাইনা, টেহা দিবো কেডা।
নকলার রামপুড় গ্রামের পাতকুয়া কৃষক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, এখানে ৪১ জনকে পানি দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পানি তো ঠিকমতো ওঠেনা। কৃষকদের পানি দেওন যায়না। তাই কেউ চাঁদাও দেয়না। যে উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছিল, তা পুরণ হয় নাই। দেখাশুনার কেউ না থাকায় এটা আস্তে আস্তে শেষ হইয়া যাইতাছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (ক্ষুদ্র সেচ) শেরপুরের সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী আল বাকী বলেন, এ পাতকুয়াগুলোর টেকনিক্যাল কাজগুলো আমরা বাস্তবায়ন করেছি। সৌর প্যানেল ব্যাটারী সবই দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী থেকে। এটির রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব আমাদের নেই। এ ছাড়া এর অর্থায়নও আমরা করিনাই। এগুলোর জন্য আমাদের কোন বাজেটও নেই। কাজেই এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। ফলে বিপুল পরিমান টাকা লাভের পরিবর্তে লোকসানই হচ্ছে। তবে প্রজেক্টি চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয় কৃষকদের।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মুহিত কুমার দে বলছে, এটি একটি পুরান পদ্ধতি। তবে সিস্টেমটা ভালো। কিন্তু ব্যবস্থাপনা সঠিক না থাকায় এটি কাজে আসছে না। এখনও রক্ষনাবেক্ষন করা হলে এখনও পাতকুয়াগুলো সচল করা সম্ভব।