সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নতুন বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে শেরপুরের কাকলী সিনেমাহল। প্রতি ঈদেই নতুন মুক্তি পাওয়া বাংলা ছায়াছবি নিয়ে দর্শক মহলে একসময় কাকলীর বেশ জনপ্রিয়তা থাকলেও এবারই প্রথম কাকলী সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে না কোন নতুন ছবি। ঈদে নতুন ছবি দেখতে কাকলী সিনেমাহলে যেমন ভীড় লেগে থাকতো, ঠিক তেমনি দর্শকদের আগ্রহকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজিটাল আয়োজনও ছিলো কাকলী সিনেমাহলে। মলিকপক্ষ বলছেন, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পর শেরপুরের দর্শকের চাহিদা মেটাতে অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স নির্মিত হবে কাকলী সিনেমাহলে।
১৯৬৯ সালে “পরশমণি” চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে শহরের মুন্সীবাজার এলাকায় কাকলি সিনেমাহলের কার্যক্রম শুরু হয়। আর চলতি বছরের জুন মাসে সিনেমাহলটি ভাঙার পূর্বে শেষ প্রদশর্নী ছিলো পোড়ামন-২। তৎকালে বিভিন্ন উপলক্ষে পুরোনো এই সিনেমাহলে নায়করাজ রাজ্জাক ও নায়িকা ববিতাসহ অনেক খ্যাতিমান অভিনেতা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে গেছেন। ১৯৭০ সালে ঐতিহ্যবাহী এই সিনেমাহলে ছাত্রলীগের সভায় বক্তব্য রেখেছিলেন স্বাধীন বাংলার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী।
কিন্তু মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তে এই সিনমাহল ভেঙে তৈরী করা হচ্ছে অত্যাধুনিক বাণিজ্যিক ভবন। নতুন এই ভবনের চতুর্থ তলা পর্যন্ত থাকবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পঞ্চম তলায় সিনেপ্লেক্স, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় হবে আবাসিক হোটেল এমনটাই বলছেন মালিক পক্ষ।
প্রতিবছর রমজানে বন্ধ থাকার পর ঈদ এলেই নতুন রঙে আর নতুন আয়োজনে দর্শকদের চাহিদা মেটাতো ঐতিহ্যবাহী এই কাকলী সিনেমাহল। শেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জ থেকেও মানুষ আসতো নতুন সিনেমা উপভোগ করতে। পরিবার পরিজন আর বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঈদের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হত কাকলী সিনেমাহল।
গত ঈদুল ফিতরে কাকলী সিনেমাহলে মুক্তি পেয়েছিলো বাংলা ছায়াছবি সুপার হিরো। বেশ দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছে গত ঈদে। কাকলী সিনেমা হলের রঙিন পর্দায় সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে উপভোগ করেছে বাংলা ছায়াছবি। কিন্তু এবারের ঈদে শেরপুরবাসীর চিত্ত বিনোদনের জন্য থাকছে মাত্র দুটি সিনেমাহল। ঈদের নতুন ছবির বিশাল র্দশকের চাহিদা কতটা পূরণ হবে, এটা নিয়ে শঙ্কিত সিনেমাপ্রেমীরা।
শেরপুর পৌরসভার মেয়র ও কাকলী সিনেমাহলের মালিকপক্ষ আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া শেরপুর টাইমসকে বলেন, সিনেমার ব্যবসা মন্দা হওয়ায় কাকলী সিনেমাহল, তার সংলগ্ন মার্কেট ও গেষ্ট হাউজ ভেঙে নতুন বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কাকলী সিনেমা হল ভেঙে ফেলা একটি ঐতিহ্যের বিদায়। তবে শেরপুরের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে আমরা একটি ৭তলা অত্যাধুনিক বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছি। যাতে একটি সিনেপ্লেক্সও থাকবে। এই বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সটি শেরপুরকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং অত্যাধুনিক এ ভবনটি নির্মিত হলে শেরপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যের আধুনিক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুর জেলাকে একসময় সিনেমাহলের শহর বলা হলেও বর্তমান সময়ে শহরের ৬ টি সিনেমাহলের মাত্র ২টি এখন টিকে আছে। দর্শক না থাকায় লিখন, মেঘনা ও পদ্মা সিনেমাহল বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তবে আধুনিক সিনেপ্লেক্সে আবারো হলমুখী হবে দর্শক, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন মালিকপক্ষ।