করোনাভাইরাস চিকিৎসায় ব্যবহৃত জাপানি একটি ওষুধ তৈরি করেছে বাংলাদেশের দুই ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিকন ফার্মা।
জাপানের ফুজি ফিল্মের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তোয়ামা কেমিক্যাল ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য ফ্যাভিপিরাভির জেনেরিক নামে ওষুধটি তৈরি করেছিল। ওষুধটির ব্র্যান্ড নাম অ্যাভিগান। চীন জানিয়েছে, ওষুধটি করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় বেশ কার্যকর। তবে জাপান সরকার এখনো করোনা চিকিৎসায় ওষুধটির অনুমোদন দেয়নি। তারা ওষুধটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
বাংলাদেশের দুই ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিকন ফার্মা ফ্যাভিপিরাভি জেনেরিকের এ ওষুধটি তৈরি করে রেখেছে। বেক্সিমকো শুধু ফ্যাভিপিরাভির নয়, প্রচলিত যেসব ওষুধ করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে, তার একটি বাদে সবগুলো তৈরি করছে। চাহিদা অনুযায়ী এসব ওষুধ সরকারকে দেবে তারা।
এ বিষয়ে সম্পর্কে বিকন ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল করিম বলেন, ‘আমরা ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটি তৈরি করে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দিয়েছি। ওষুধটির কার্যকারিতা পাওয়া গেলে বাণিজ্যিক উৎপাদন করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ওষুধটি মূলত ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য জাপানের ফুজি তৈরি করেছিল। চীনারা এটি প্রয়োগ করে সুফল পায়। আমরা চীন থেকে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্ট এনেছি।’
মোহাম্মদ এমদাদুল করিম জানান, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ তৈরিতে মেধাস্বত্ব লাগে না। তাই কোনো আইনি জটিলতা ছাড়াই জাপানি ওষুধটি তারা তৈরি করতে পারবেন।
বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) রাব্বুর রেজা বলেন, বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ওষুধ পরীক্ষা করছে। আমরা রেমডেসিভির বাদে সবগুলোই তৈরি করে মজুত করছি। যাতে যে কোনো একটি কার্যকর প্রমাণিত হলে এবং অনুমোদন দেওয়া হলে আমরা সরকারকে সরবরাহ করতে পারি। তিনি বলেন, আইভারমেকটিনের কাঁচামালও আনা হচ্ছে। এটি তৈরি করা হবে।‘
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে আইভারমেকটিন। কারণ এটি সস্তা ও সহজলভ্য।’
অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের গতকাল শনিবারের এক খবরে বলা হয়, মোনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউট ও ডোহার্টি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, আইভারমেকটিন শরীরে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পারে। যদিও বিষয়টি একেবারেই পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।
হংকংয়ের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট গত ৪ এপ্রিল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, চীনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনলজি ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ঝ্যাং জিনমিন ১৮ মার্চ বলেন, চীনের দুটি মেডিকেল ইনস্টিটিউশন ফ্যাভিপিরাভির প্রয়োগ করে দেখেছে, এটি করোনাভাইরাসজনিত কিছু লক্ষণ কমাতে কার্যকর। এর মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া। এর বিশেষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের মতামত ভিন্ন। তারা বলছে, এটি বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যা মৃত্যুও ঘটাতে পারে। জাপানের দুই প্রতিবেশী ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের প্রয়োগ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছে।