সন্ধ্যা নদীকে পেছনে ফেলে যখন ভীমরুলির দিকে এগিয়ে যাবেন, দেখবেন সারি সারি নৌকা। নৌকাগুলোর আকার বেশ ছোট, পেয়ারার ভারে প্রায় ডুবুডুবু অবস্থা। বাগান থেকে সদ্য ছেঁড়া পেয়ারা বোঝাই নৌকাগুলো দেখেই বুঝবেন, আপনি ভাসমান বাজারের ঠিক পথেই আছেন। ওই বাজারে প্রতিদিন পেয়ারা বোঝাই শত শত নৌকা নিয়ে বিক্রেতারা খুঁজে বেড়ায় পাইকারদের।
বলছিলাম এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাজারের কথা। এটি ভীমরুলি, কুরিয়ানা ও আটঘরে অবস্থিত। এখানে শুধু বাণিজ্যই হয় না, এটি এখন জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রও বটে। এ বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে জমে উঠেছে এই বাজার। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত জমজমাট থাকবে, এরমধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন স্বল্প খরচে।
বাজারে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে, চারদিকে পেয়ারা ভর্তি ছোট-বড় অসংখ্য নৌকার সমাহার। পেয়ারার ঘ্রান নাকে এসে লাগবে। ঠিক তখনই প্রাণ ফিরে পাবে চাঞ্চল্য। ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলী গ্রামের পেয়ারা চাষি সুজন হালদার শানু বলেন, ‘আমরা ১শ’ টাকায় ১ মণ পেয়ারা বিক্রি করি। সেই পেয়ারা ঢাকায় কেজিপ্রতি ১০০-১২০ টাকা বিক্রি হয়।’ চাইলে আপনিও পেয়ারা কিনে বাড়ি ফিরতে পারেন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ঝালকাঠীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় ‘এমভি টিপু’ এবং ‘এমভি সুন্দরবন-২’ লঞ্চ। ভাড়া ডাবল কেবিন ১ হাজার ৮শ’ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার টাকা এবং ডেকে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা। এছাড়া, গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহন, দ্রুতি, ঈগল, সুরভীসহ আরো কয়েকটি পরিবহনের এসি ও নন এসি বাস যায়। এসির ভাড়া ৮০০ থেকে শুরু, নন এসিতে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় যাওয়া যায়।

পেয়ারার হাট
বাসে গেলে ঝালকাঠীতে নেমে উঠে পড়ুন মোটরবাইকে। এই হাটে যেতে সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা। আর ইঞ্জিন নৌকায় গেলে লাগবে এক ঘণ্টার বেশি। এছাড়া লঞ্চঘাট কিংবা কাঠপট্টি থেকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। ১০ জনের চলার উপযোগী একটি নৌকার সারাদিনের ভাড়া ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
থাকবেন যেখানে
ভাসমান পেয়ারার হাট ভ্রমণে রাতে থাকার প্রয়োজন হয় না। দুপুরের মধ্যে ঘুরে সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠে ঢাকায় চলে আসতে পারেন। তবে থাকতে চাইলে ঝালকাঠি শহরই ভরসা। সেখানে উন্নত মানের হোটেল নেই। কালিবাড়ি রোডে ‘ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউস’, বাতাসা পট্টিতে ‘আরাফাত বোর্ডিং’, সদর রোডে ‘হালিমা বোর্ডিং’ হচ্ছে ঝালকাঠির উল্লেখযোগ্য হোটেল। ভাড়া পড়বে ১শ’ থেকে ২৫০ টাকা। তবে ভালো কোনো হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে বরিশাল সদরে।
বাজেট
আপনার টাকা থাকলে ইচ্ছে মতো খরচ করতে পারবেন। তবে এক হাজার টাকায়ও ঘুরে আসা সম্ভব। সেক্ষেত্রে অন্তত ৫ জনের দল হতে হবে। সদরঘাট থেকে ঝালকাঠির লঞ্চে (ডেকে) উঠে যান। লঞ্চ থেকে নামার সময় ভাড়া দেবেন। প্রথমেই ভাড়া দিতে গেলে ওরা বেশি ভাড়া নেবে। লঞ্চ থেকে নামার পর একটি নৌকা ঠিক করে ফেলুন। ভাড়া নেবে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। আটঘর, কুড়িয়ানা আর ভীমরুলি ঘুরিয়ে আবার আপনাকে এখানে পৌঁছে দেবে বিকেলের মধ্যে। আবার লঞ্চে ঢাকায়!