শেরপুরে প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। আবাদী-অনাবাদী জমিতে কৃষকরা এখন সরিষা চাষ করছেন।
অন্যান্য ফসলের তুলনায় বিশেষ করে জেলার চরাঞ্চলে সরিষা চাষ বেশি হয়। অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ চলছে। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের মাঠ। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার ফুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।

এদিকে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন তোলার পরপরই বপন করা হয়েছে সরিষা। হলুদের চাদরে এখন ঢাকা পড়েছে বিভিন্ন চরের বিস্তীর্ণ মাঠ। কম খরচে বেশি ফলন হওয়ায় সরিষা চাষে তাদের আগ্রহ বেড়েছে।
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুরের সরিষা চাষি নূরুল ইসলাম জানায়,আমরা আমন আবাদের পর কয়েক মাস পরে থাকা জমিতে এই সরিষার আবাদ করে বাড়তি আয় করি। এবার সোয়া একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এ সরিষা উঠিয়ে বোরোর আবাদ করতে অর্থনৈতিক সুবিধা পাবো।
শ্রীবরদী উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের কুড়িপাড়ার কৃষক আঃ জব্বার আলী বলেন, ইরি-বোরো চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদের আগে খরচ পোষাতেই সরিষা চাষ করি আমরা। এবারও দেড় একর জমিতে সরিষা চাষ করেছি।
কৃষক রহমত মিয়া বলেন, আমন ধান কাটার পর দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আশা করছি বেশ ভাল ফলন হবে। এই সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের তেল ও সার কেনার টাকা জোগাড় হয়ে যাবে।
নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা এলাকার কৃষক ছামিদুল হক বলেন, ধান কাটার পর বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা আবাদ করি। ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সরিষা আবাদ করে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঝামাঝি সময়ে সরিষা ঘরে তোলা যায়। আবার সেসময় সরিষা তুলে ধান রোপণ করা যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত তিন বছরের মধ্যে এবার সরিষার আবাদ অনেক বেশী হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সরিষা আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিলো ৭ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে, অর্জিত হয় ৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অর্জিত হয় ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। ওই বছর দেশে করোনা কালীন নানা সমস্যা এবং চরাঞ্চলে বন্যা ও বৃষ্টির পানি দেরিতে নেমে যাওয়ায় অনেকেই আবাদই করতে পারেনি। এরপর চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে এবং ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে গত দুই বছরের চেয়ে বেশী ৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে জানায়, সরিষা মূলত একটি মসলা জাতীয় ফসল। স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষককে অধিক ফলন পেতে নানা ভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যাতে কৃষকের কোন সমস্যার না হয়। আশা করছি প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে।