ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা বাজলেই নিষেধাজ্ঞার খাতা থেকে উঠে যাবে সাকিব আল হাসানের নাম। এরপর থেকেই ক্রিকেটের আকাশে দেশের সবচেয়ে বড় এই ‘বিজ্ঞাপন’ উড়বেন ডানা মেলে। অস্ট্রেলিয়া থেকে ক্যারিবীয়, আইপিএল, পিএসএল কিংবা বিগব্যাশ বিশ্বজুড়ে খেলে বেড়ানো সাকিব বন্দী ছিলেন খাঁচায়। অবশেষে সেই খাঁচা থেকে মুক্ত হচ্ছেন সাবেক বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
সাকিব এখন পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ক্রিকেটে তার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা সাকিবকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে সাকিব নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। খোলামেলা কথা বলেছেন ক্রিকেটে তার প্রত্যাবর্তন নিয়ে। জানিয়েছেন পরিকল্পনা নিয়ে। কাল বৃহস্পতিবার থেকেই মুক্ত হচ্ছেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। এবার তার কী পরিকল্পনা?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গেসহ বোর্ডের সবার সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার সাথে সবসময় যোগাযোগ হয় (বিসিবির সাথে), বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর সাথে কথা হয়, পাপন ভাইয়ের সাথে সবসময় যোগাযোগ আছে, আকরাম ভাইয়ের সাথে নিয়মিত কথা হয়, নির্বাচকদের সাথে কথা হয়। সবার সাথেই যোগাযোগ আছে, সবার সাথেই কমিউনিকেশন হচ্ছে। ’
তবে যে পরিকল্পনাটা সেটা দেশে ফিরেই করতে চান সাকিব। ‘বাংলাদেশে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফিরব ইনশাআল্লাহ। তারপর আসলে মাঠে প্রক্রিয়াগুলো কি হবে তার একটা রূপরেখা তৈরি হবে। এখান থেকে আসলে এই রূপরেখাগুলো তৈরি করা সম্ভব নয়। এটা দেশে ফেরার পরই করা হবে, বিসিবির সাথে কথা বলে অবশ্যই করা হবে। সেটা সুন্দরভাবে যাতে করা যায় সেভাবেই করা হবে। কিন্তু সেটা দেশে যাবার পরেই বলা সম্ভব’-পরিকল্পনা নিয়ে এভাবেই বলেছেন সাকিব।
সাকিব জানিয়েছেন, তিনি নিজের সেক্টরে (ক্রিকেটের মাধ্যমে) দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। সাকিব বলেন, ‘আশা করছি আপনারা আন্তরিকতা, ভালোবাসা, সাপোর্ট সবসময় আমাদেরকে দিবেন। আমাকে, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে, বাংলাদেশের মানুষকে, বাংলাদেশকে ইনফ্যাক্ট। যেভাবে আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমি আমার সেক্টরকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করব, আপনারাও আপনাদের জায়গা থেকে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করবেন।’
জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় গত বছর অক্টোবর মাসেই সব ধরনের ক্রিকেটে সাকিবকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয় আইসিসি। এর মধ্যে রয়েছে এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালার আইন লঙ্ঘনের অপরাধে সাকিবকে এ শাস্তি দেয় বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ শাস্তি মেনেও নেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল এই ক্রিকেটার। এক দিন পর ক্রিকেটে ফিরলেও ভবিষ্যতে যদি একই ধরনের অপরাধ করেন তা হলে সাকিবের এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
এক বছরের নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে ক্রিকেটে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তার। এজন্য করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এসে বিকেএসপির মাঠে নিবিড় অনুশীলনও করেন বাংলাদেশের বিশ্ব তারকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকা সফর আপাতত স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আবারও যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে চলে যান সাকিব।
অবশ্য সেখানে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হয়েই খেলায় ফিরবেন সাকিব। আগামী মাসেই ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে আবারও ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন হবে তার। পাঁচ দলের একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজন করবে বিসিবি। আগামী নভেম্বরের ১৫ তারিখ টুর্নামেন্ট শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করেছে বোর্ড। এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে সাকিব ক্রিকেটে ফিরবেন বলে জানিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।