দৈনিকশিক্ষা ডটকম : এমপিওভুক্তির দাবিতে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা টানা ১০ দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিপরীত পাশের সড়কে এ কর্মসূচিতে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা যোগ দিচ্ছেন। মঙ্গলবার (১৯ জুন) সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষকরা। অবস্থান কর্মসূচিতে এমপিওর দাবি বাস্তবায়ন না হলে দুই একদিনের মধ্যে অনশনের মতো কঠিন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন শিক্ষকরা। এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। উল্টো বিভিন্ন আইন তৈরি করে আমাদের বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
এ কারণে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন,এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট আশ্বাস ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়ি ফিরে যাবে না। প্রতিদিন এ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। এতেও যদি আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হয় তবে, লাগাতার অনশন কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার বিষয়ে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য না থাকায় গত ১০ জুন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অর্ধদিবস অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। গত জানুয়ারিতে সরকারের দেয়া এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাজেটে কোনও বরাদ্দ না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা ফের রাজপথে নেমেছেন।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, কোন অবস্থাতেই আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাজপথ ছাড়ব না। আমরা আশা করছি মাননীয় প্রধনমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি দ্রুত এমপিও বাস্তবায়ন করবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না।
আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষকরা জানান, আমরা বেতন-ভাতার জন্য পরিবার ছেড়ে রাজপথে নেমেছি। ঈদের দিনেও পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারিনি। একটু মিষ্টি মুখে দেয়ার ভাগ্য হয়নি। শিক্ষাকতা করে কি আমরা অপরাধ করছি? তাই ন্যায্য দাবি আদায়ে আমাদের স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে। শিক্ষকদের অভিযোগ,দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে এখনও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারেন না। সমাজে তাদের কোনো সম্মান নেই। টিউশনি করিয়ে যা অর্থ আয় হয় তা দিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়।
গত ১০ জুন থেকে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন শিক্ষকরা। তিনদিন রাস্তার ওপরই ইফতার করেছেন। ঈদের দিনে ভুখা মিছিল করেছেন। শিক্ষকদের এ আন্দোলন কর্মসূচি মঙ্গলবার (১৯ জুন) ১০ দিনে গড়ালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ এখনো তাদের খোঁজ খবর নেননি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে পাশের সড়কে সকাল থেকে তারা অবস্থান নেন।
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে ওই অবস্থান কর্মসূচি চলার এক পর্যায়ে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান। আশ্বাসের ভিত্তিতে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২৭ হাজার ৮১০টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৬২ জন। তাঁদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় ৯৪২ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে ২ হাজারেরও বেশি নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।
সূত্র : দৈনিকশিক্ষা ডটকম