সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) দাখিল বাধ্যতামূলক করে সংশোধিত নতুন এমপিও নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এটি হবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও এবং জনবল কাঠামো নীতিমালার তৃতীয় সংশোধনী। এর আগে ২০১৩ ও ২০১০ সালে দুই দফায় এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হয়। ১৯৯৫ সালে তৈরি করা হয় এই নীতিমালা।
এবারের সংশোধনীতে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে নম্বর গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে বলেও জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে গ্রেডিং ১০০ নম্বর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হবে।
একাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর প্রতি দুই বছরের জন্য ৫ নম্বর। ১০ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ নম্বর।
শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর ২৫ নম্বর কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর। এর পর ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে ৫ নম্বর।
পরীক্ষার্থীর সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর কাম্য সংখ্যার ক্ষেত্রে ১৫ এবং পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য ৫ নম্বর।
পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য ২৫ নম্বর কাম্য হার অর্জনে ১৫ নম্বর এবং পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ পাসে ৫ নম্বর।
এভাবে গ্রেডিং করা হবে। সংশোধনী নীতিমালায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রভাষকদের এমপিওভুক্তিতে বিষয়ভিত্তিক ২৫ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে ১৫ জন করা হয়েছে। নতুন জনবল কাঠামোয় সৃষ্ট পদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনভাতা দেওয়া হবে না। তবে নতুন পদে এমপিওভুক্ত করা হবে। নতুন জনবল কাঠামোর বাইরে কর্মরত পদ শূন্য হলে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। যারা এমপিওভুক্ত নন কিন্তু বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের নতুন পদে পদায়ন করতে হবে।
চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের ডিগ্রিধারী শিক্ষক নিয়োগে কোনো বিধিনিষেধ নেই। সর্বশেষ ডিগ্রি ছাড়া শিক্ষাজীবনে একটি তৃতীয় শ্রেণি প্রাপ্তরা আবেদন করতে পারবেন। বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে ৩০০ নম্বরের স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে স্নাতক (পাস) স্তরে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগের জন্য দীর্ঘদিনের দাবি এবারও উপেক্ষিত হয়েছে। মাধ্যমিক স্কুল-কলেজে উন্নীত হলে প্রধান শিক্ষক স্বপদে স্ববেতনে বহাল থাকবেন। কলেজ স্তর এমপিওভুক্ত না হলে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হলে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তবে এমপিও হলে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া যাবে।
সংশোধিত এই নীতিমালা অনুমোদন হলে সারা দেশে ২৬ হাজার ৯০টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আরও সোয়া লাখ শিক্ষক-কর্মচারী নতুন করে এমপিওভুক্ত হবেন। নীতিমালা জারির পর অনুমোদিত ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য ক্যাম্পাস ও শাখা চালানো যাবে না। অনার্স-মাস্টার্স কলেজ, অনার্স ও কামিল মাদ্রাসা, সংগীত কলেজ, শরীরচর্চা কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ও নৈশকালীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নীতিমালার আওতায় আসবে না।
জানা গেছে, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো অনুযায়ী, নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে একটি করে পদ রয়েছে। নতুন জনবল কাঠামোয় এই তিনটি পদ ছাড়াও কৃষি, গার্হস্থ্য, গণিত, ভৌতবিজ্ঞান, ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, চারু ও কারুকলার নতুন পদ সৃষ্টি হবে। কম্পিউটার ল্যাব থাকলে একজন ল্যাব অপারেটর নিয়োগ দেওয়া যাবে। এ ছাড়া অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী ও আয়াসহ (সহশিক্ষা ও বালিকা বিদ্যালয়) ১৯টি পদ প্রস্তাব করা হয়েছে।
মাধ্যমিক স্কুলে বাংলা, ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের তিনজন শিক্ষকের এমপিওভুক্ত পদ রয়েছে। নতুন করে সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা (বিজ্ঞান বিভাগ চালু থাকলে) বিষয়ে আলাদা দুটি পদসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, গণিত, ভৌতবিজ্ঞান, ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা, কৃষি, গার্হস্থ্য, চারু ও কারুকলা, জীববিজ্ঞান (বিজ্ঞান বিভাগ চালু থাকলে) শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে উপাধ্যক্ষ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।
নীতিমালা প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এমপিও নীতিমালা-২০১৮ চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। আগের চেয়েও অধিকতর যুগোপযোগী করার চেষ্টা করছি। আইসিটিসহ অনেক বিষয় নতুন করে চালু করা হলেও পদ সৃষ্টি করা হয়নি। শিক্ষক সংকটের কারণে এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়ে পড়াচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন জনবল কাঠামো হবে নতুন নীতিমালায়।