ইউনাইটেড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া আরেক শিশুর মা বিচার চাইতে এসেছেন হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) আয়ানের রিটের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুমের সঙ্গে আদালতে আসেন তিনি।
বিচার চাইতে আসা মা জানান, ২০১৫ সালে লেবার পেইন নিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রথমে তারা সিজারে ডেলিভারি করার জন্যে চাপ দিতে থাকে। পরবর্তীতে প্রসবের পরেও বাচ্চাকে এনআইসিইউতে নিয়ে যায় তারা। অভিভাবকরা জানতে চাইলেও তখন বিলের বিষয় ছাড়া কোনো কথা বলেননি তারা।
সন্তান হারা সেই মা আরও জানান, ‘আমরা একজন আইনজীবীর এবং শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। তখন তারা জানান, এটা তাদের হাসপাতালের নিয়ম। পুরো দেড় মাস আমার বাচ্চাকে তারা এনআইসিইউতে রেখে মৃত শিশুকে আমাদের কাছে ফেরত দেন। অথচ জন্মের সময় আমার বাচ্চা সুস্থ ছিলো। মৃত শিশুর সঙ্গে হাসপাতালের বিল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আমাদের কাছে দিয়ে যান।
আদালতে এসে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া শিশু আয়ানের বিচার চাওয়ার পাশাপাশি নিজের সন্তানের মৃত্যুর বিচার চান তিনি। তিনি বলেন, আমি জানি সন্তান হারানোর কী কষ্ট। আমি এ ঘটনার পরে এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে সেখান থেকে উঠে আসতে আমার সময় লেগেছে। আমি সে সময় বিচার চাইতে পারিনি, তাই এখন এসেছি আদালতে।
এদিকে আলোচিত ঘটনা ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজে চিকিৎসায় গুরুতর অবহেলায় শিশু আয়ানের মৃত্যুর অভিযোগে তার পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেনো নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুল ও আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধান করার নির্দেশনার বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানির কথা ছিল আজ (বৃহস্পতিবার)। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত প্রতিবেদন এখনও হাইকোর্টে জমা না দেওয়ায় এ বিষয়ে শুনানি হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা ও আদেশের জন্য আগামী রবিবার (২৮ জানুয়ারি) নতুন দিন ঠিক করেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য পাঁচ বছরের শিশু আয়ানকে রাজধানীর সাতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে তার অভিভাবকরা। সেখানে শিশুর অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই ৫ বছরের আয়ানকে ফুল এনেস্থিসিয়া (জেনারেল) দিয়ে সুন্নতে খাতনা (মুসলমানি) করান চিকিৎসকরা। খতনা শেষ হওয়ার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইভ সাপোর্টে রাখা হয়। সেখানে নিয়ে আসার আটদিন পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর ব্যাপারে আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ চিকিৎসকদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন।