বনিবনা না হওয়ায় প্রায় ১১ বছর আগে স্বামীর সংসার ছাড়েন শাহিদা (ছদ্মনাম)। এরপর বাবার বাড়িতে থেকেই চাকরি নেন এনজিওতে। কাজ করার সুবাদে পরিচয় হয় ৪৫ বছরের নয়ন মিয়ার সঙ্গে। একপর্যায়ে গড়ে ওঠে তাদের প্রেম। হয় শারীরিক সম্পর্কও। তবে বিয়ের নাটক সাজিয়ে বছরের পর বছর ধরে শাহিদার সঙ্গে মেলামেশা করেন নয়ন। বিয়ের প্রমাণ চাইলেই শুরু হয় নয়নের টালবাহানা। অবশেষে তার প্রতারণা বুঝতে পারেন স্বামী পরিত্যক্তা এ নারী।
বিষয়টি নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কোনো বিচার পাননি শাহিদা। অবশেষে নয়ন ও কাজির বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী।
ঘটনাটি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার এসআই এইচএম ইমন। অভিযুক্ত নয়ন মিয়া কালীগঞ্জ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী। তিনি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের মাথিচর গ্রামের আমান উল্লাহর ছেলে। তবে কালীগঞ্জ পৌরসভার মুনশুরপুর এলাকায় স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি।
ভুক্তভোগী নারী জানান, বনিবনা না হওয়ায় প্রায় ১১ বছর আগে তাকে তালাক দেন স্বামী। এরপর বাবার বাড়িতে থেকে স্থানীয় এনজিওতে চাকরি নেন। কাজ করার সুবাদে নয়নের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। দীর্ঘদিন কথা বলার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর সম্পর্কের জেরে একেক সময় একেক জায়গায় নিয়ে তার সঙ্গে মেলামেশা করেন নয়ন।
বিয়ের ব্যাপারে চাপ দিলে কখনো আল্লাহর নামে কসম আবার কখনো বিভিন্ন দরবার শরীফে নিয়ে কসম কেটে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন। এভাবে তাদের গোপন মেলামেশা চলে সাত বছর। এর মধ্যে বিয়ের রেজিস্ট্রিসহ প্রয়োজনীয় কাজগপত্র করার কথা বললে নাটক সাজান নয়ন।
তিনি জানান, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম গ্রামের কাজি মো. আবু তাহেরের বাড়িতে তার সঙ্গে নয়নের বিয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে কাজি ছাড়াও রাখা হয় উকিল বাবা, মাওলানা ও সাক্ষী। সাদা কাগজে নেয়া হয় বর-কনের স্বাক্ষর। বিয়ে পড়ানো শেষে করা হয় মিষ্টি বিতরণ। এরপর তাকে নিয়ে কালীগঞ্জ পৌর শহরের মুনশুরপুর, দড়িসোম, বাঙ্গালহাওলা ও গাজীপুর নগরীর মিরের বাজার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করেন নয়ন। দীর্ঘ আট বছরে নিজের ব্যবসার মন্দার অজুহাত দেখিয়ে তার কাছ থেকে নয়ন চার-পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ তার। একপর্যায়ে টাকা দিতে না পারায় তার ওপর নির্যাতনও চালানো হয়।
স্বামী পরিত্যক্তা এ নারী আরো জানান, নির্যাতন করলে মাঝেমধ্যে থানা-পুলিশের ভয় দেখালে তাকে বিয়েই করেননি বলে অস্বীকার করতেন নয়ন। আর বলতেন- ‘তোকে ফু দিয়ে বিয়ে করেছি, ফু দিয়েই আবার তালাক দিয়েছি। পারলে তুই আমার কিছু করিস। আর এ ব্যাপারে তুই যদি কারো কাছে যাস তাহলে তোকে গুম করে দেবো’। এখন স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে গড়িমসি করছেন নয়ন। কাজির কাছে গেলে কাজিও কোনো কাগজপত্র হয়নি বলে জানান।
কাজি মো. আবু তাহের বলেন, ওইদিন আমার বাড়িতে তারা এসেছিলেন। তবে বিয়ের ব্যাপারে কোনো কাগজপত্র বা বিয়ে পড়ানো হয়নি।
অভিযুক্ত নয়ন মিয়া বলেন, তার সঙ্গে আমার প্রেম বা বিয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে বিভিন্ন সময় তার বাড়িতে গিয়ে বাজার-সদাই, ওষুধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করতাম।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আনিসুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
#ডেইলি বাংলাদেশ