একা বিমান চালিয়ে সারা বিশ্বের আকাশপথে ঘুরে বেড়ানো সবচেয়ে কম বয়সী নারী হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন বৈমানিক জারা রাদারফোর্ড। এর মাধ্যমে নতুন দুটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস গড়েছেন ১৯ বছর বয়সী এই তরুণী।
২০১৭ সালে ৩০ বছর বয়সে একা বিমান চালিয়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিলেন আমেরিকার শায়েস্টা ওয়াইজ। তার সেই রেকর্ড এখন জারার দখলে। শুধু তাই নয়, মাইক্রোলাইট এয়ারক্রাফটে (১-২ আসনের ছোট আকারের বিমান) চড়ে পৃথিবী ঘুরে দেখা প্রথম নারীর স্বীকৃতিও তার নামের পাশে যোগ হয়েছে। সারাবিশ্বে একা ভ্রমণ করা প্রথম বেলজিয়ান তিনিই। তার ব্রিটিশ-বেলজিয়ান দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বেলজিয়ামের পশ্চিমে কোর্তরাইক-বেইফোহেম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন জারা। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় ১৫৫ দিনে পাঁচ মহাদেশের ৫২টি দেশে তার মহাকাব্যিক যাত্রা। এজন্য তিনি পাড়ি দিয়েছেন ৫২ হাজার কিলোমিটারের (৩২ হাজার ৩০০ মাইল) বেশি পথ।
গৌরব অর্জনের পথটা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং ছিল জারার বেলায়। ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট চেকোস্লোভাকিয়ার প্রতিষ্ঠান শার্ক এরো’র একটি বিমান নিয়ে প্রথমবার উড্ডয়ন করেন তিনি। এতে ছিল একটি পুরনো রেডিও ও প্যারাসুট। এছাড়া তার পাশে আসন রাখার পরিবর্তে যুক্ত করা হয় অতিরিক্ত জ্বালানি ট্যাঙ্ক। এটি ঘণ্টায় ১৬০ মাইল বেগে চলতে পারে।
জারার ধারণা ছিল, তিন মাসের মধ্যে নিজের দুঃসাহসিক অভিযান শেষ করতে পারবেন। এজন্য বড়দিনকে লক্ষ্যও করেছিলেন তিনি। কিন্তু আলাস্কা ও রাশিয়ায় ভিসা নিয়ে বিপত্তি ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দুই মাস বেশি সময় লেগেছে তার।
সংবাদ সম্মেলনে জারা রাদারফোর্ড বলেছেন, ‘আমার এই যাত্রায় সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল সাইবেরিয়ার ওপর দিয়ে বিমান চালানো। কারণ দেশটি অত্যন্ত শীতল। তখন মাটিতে ছিল মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তখন যদি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতো তাহলে আমাকে উদ্ধারের জন্য আসতে কয়েক ঘণ্টা লাগতো। জানি না কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারতাম! এটাও একটা অ্যাডভেঞ্চার!’
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের সিয়াটলে দাবানলের কারণে দেখতে সমস্যা হওয়ায় ক্যালিফোর্নিয়ার রেডিং শহরে অনির্ধারিত অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন জারা। এছাড়া চীনের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি তার। করোনা বিধিনিষেধের কারণে সিঙ্গাপুর, মিসর ও গ্রিসসহ কিছু দেশে অবতরণ করতে পারেননি তিনি।
শার্ক এরোর এই বিমান চালিয়ে সবচেয়ে কম বয়সী নারী হিসেবে বিশ্বভ্রমণ করে খ্যাতি পেয়েছে জারা রাদারফোর্ড
শার্ক এরোর এই বিমান চালিয়ে সবচেয়ে কম বয়সী নারী হিসেবে বিশ্বভ্রমণ করে খ্যাতি পেয়েছে জারা রাদারফোর্ড
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করতে আগামী সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন জারা রাদারফোর্ড। তার বাবা-মা উভয়ে বৈমানিক। ১৪ বছর বয়স থেকে বিমান চালানো শিখেছেন তিনি। ২০২০ সালে প্রথম লাইসেন্স পান তিনি।
রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি জারা রাদারফোর্ডের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বিমান চালনায় নারীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ নিশ্চিত করা। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ উইমেন এয়ারলাইন পাইলটের (আইএসএ) তথ্যানুযায়ী, সারা বিশ্বে মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ পাইলট নারী। এ নিয়ে গত বছর হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
নিজের বিশ্বযাত্রায় দুটি দাতব্য কর্মসূচির জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন জারা। এগুলো হলো ‘গার্লস হু কোড’ এবং ‘ড্রিমস সোর’। ‘গার্লস হু কোড’-এর মাধ্যমে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তে আগ্রহী মেয়েদের সহায়তা করা হয়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে পড়ার ইচ্ছে থাকা নারীদের সহযোগিতা করে আমেরিকার শায়েস্টা ওয়াইজ প্রতিষ্ঠিত ‘ড্রিমস সোর’।
জারার আশা, তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী আকাশযাত্রা বিমান চালানোকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে নারীদের উৎসাহিত করবে। তিনি বলেন, ‘যদি চেষ্টা না করেন এবং দেখেন কতটা উঁচুতে উড়তে পারেন, তাহলে কখনোই তা জানতে পারবেন না।’